রিবারের অমতে ভালোবেসে হাসনা হেনা ঝিলিককে বিয়ে করেছিলেন সাকিব আলম মিশু। বিয়ের দুই বছরের মাথায় সেই ভালোবাসার মানুষই তাকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ স্বজনদের।
পুলিশ জানিয়েছে, হাসনা হেনা ঝিলিককের (২৩) মৃত্যু হয়েছে রাজধানীর গুলশানের বাসায়। শনিবার সকালে মৃত স্ত্রীকে গাড়িতে করে হাসপাতালে নেওয়ার সময় হাতিরঝিলে দুর্ঘটনার নাটক সাজান সাকিব।
পুলিশ জানিয়েছে, ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা পরীক্ষা করে দেখা গেছে, গুলশান-২ এর ৩৬ নম্বর রোডের ২২/সি নম্বর বাসা থেকে সকালে চারজন ওই নারীর নিথর দেহ গাড়িতে তোলেন।
গৃহকর্মী ও বাসার লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিষ জানতে পেরেছে, শুক্রবার রাতে ঝিলিক ও সাকিবের তুমুল ঝগড়া হয়। মারধর করা হয় ঝিলিককে। তাদের ৯ মাসের শিশুসন্তানকে তার দাদি সাঈদা আলমের কাছে রাখা হয়।
সকালে মাকে পাশে না পেয়ে কান্নাকাটি করে শিশুটি। এ সময় বাসার গৃহকর্মী শিশুটিকে তার বাবা-মায়ের কক্ষে নিয়ে যান। তখন তিনি একই খাটে শিশুটির বাবা-মাকে শুয়ে থাকতে দেখে ডাকাডাকি করেন।
এক পর্যায়ে ঝিলিকের শরীরে হাত দিয়ে দেখেন শরীর ঠান্ডা এবং শক্ত হয়ে আছে। নড়াচড়া করছে না। নাকে-মুখে হাত দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ পান। ঝিলিকের পাশেই শুয়ে ছিলেন তার স্বামী সাকিব আলম মিশু।
নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, রাতে ঝিলিককে মারধর ও শ্বাসরোধে হত্যার পর তার পাশেই রাত কাটিয়েছেন মিশু। ঝিলিকের পরিবার আর্থিকভাবে অসচ্ছল হওয়ায় তাকে মেনে নিতে চাইত না সাকিবের বাবা-মা। এজন্য সাকিবের পরিবার ঝিলিকের পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চাইত না। সাকিবের পরিবার বিভিন্ন সময় ঝিলিককে নির্যাতন করত।
তদন্ত-সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মিশু বলেছেন, বৃহস্পতিবার রাতেও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া বাধে। ওই রাতে ঝিলিক ঘুমের ট্যাবলেট খেয়েছিল। রাতেই তিনি গাড়িতে করে ধানমণ্ডির একটি হাসপাতালে নিয়ে যান স্ত্রীকে। প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাকে বাসায় আনা হয়। অবশ্য পুলিশ তার বক্তব্য যাচাই-বাছাই করছে।
মিশু নিয়মিত মদপান ও ইয়াবা সেবন করতেন। এ ছাড়া নেশাজাতীয় প্যাথিডিন ইনজেকশন পুশ করতেন শরীরে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ওই নারী দুর্ঘটনায় আহত হয়ে মারা যাওয়ার কোনো আলামত নেই শরীরে। তার পা, মাথা ও গলায় আঘাতের কালচে দাগ রয়েছে। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জানিয়েছেন, তাকে হয়তো বালিশ চাপা (শ্বাসরোধে) দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জানান, ওই নারীর পা, মাথা ও গলায় একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাকে হয়তো শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।
ময়নাতন্তকারী চিকিৎসকের বরাত দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, বালিশ চাপা দিয়ে কাউকে হত্যা করা হলে যে ধরনের লক্ষণ দেখা যায়, ওই নারীর শরীরে একই ধরনের লক্ষণ রয়েছে।
নিহতের পরিবার জানিয়েছে, দুই বছর আগে প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে তাদের বিয়ে হয়। তাদের আট মাস বয়সি ছেলে সন্তানও আছে। আর্থিক দিক থেকে দুটি পরিবারের মধ্যে সামঞ্জস্যতা ছিল না। আর্থিক দিক থেকে সচ্ছল হওয়ায় সাকিবের পরিবার ঝিলিকের পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চাইত না। সাকিবের পরিবার বিভিন্ন সময় ঝিলিককে নির্যাতন করত।
ঝিলিকের মা আসমা বেগম জানান, তার স্বামী (ঝিলিকের বাবা) আনোয়ার হোসেন এক বছর আগে মারা গেছেন। তাদের তিন মেয়ে এবং এক ছেলে। তিনি অন্য সন্তানদের নিয়ে মোহাম্মদপুরে থাকেন।
এ ঘটনায় ঝিলিকের মা গুলশান থানায় মামলা করেছেন। গতকাল রোববার স্বামী সাকিব আলম মিশুর তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। একইসঙ্গে ঝিলিকের শ্বশুর-শাশুড়িসহ চারজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
কারাগারে যাওয়া চার আসামি হলেন- ঝিলিকের শ্বশুর জাহাঙ্গীর আলম, শাশুড়ি সাঈদা আলম, দেবর ফাহিম আলম ও টুকটুকি।
সর্বশেষ আপডেট: ৫ এপ্রিল ২০২১, ১৪:১৬
পাঠকের মন্তব্য