* খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানায় অগ্নিসংযোগ, ওসিসহ আহত ৫
* হামলায় সিরাজদিখানের ওসি আহত
হেফাজতে ইসলামের সকাল-সন্ধ্যা হরতালকে কেন্দ্র করে রোববার দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টাধাওয়া গুলীবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজত নেতা-কর্মী ও মাদরাসা ছাত্রদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সরাইলে হরতালকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়েছেন। খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানায় অগ্নিসংযোগে ওসিসহ আহত হয়েছেন ৫ জন।
হামলায় মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান থানার ওসি আহত হয়েছেন। এদিকে হরতালকে কেন্দ্র করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সকাল থেকে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিজিবি হেফাজত কর্মীদের লক্ষ্য করে গুলী ছুঁড়েছে বলে দাবি করেছে হেফাজত ইসলাম। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড থেকে চিটাগাংরোড পর্যন্ত রণক্ষত্রে পরিণত হয়। হরতালকে কেন্দ্র করে শনিবার রাত থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপরতা শুরু করে। রাজধানীতে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্কলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয় আগে থেকেই ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়। হরতাল চলাকালে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবিকে টহল দিতে দেখা যায়। রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে, মোড়ে মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা প্রস্তুত ছিল।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে গতকাল রোববার হেফাজতে ইসলামের হরতালকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে দুই জন নিহত হয়েছে। সরাইলে পুরো সড়ক–মহাসড়ক সকাল থেকেই হরতাল সমর্থক হেফাজতের কর্মী ও তাদের অনুসারীদের নিয়ন্ত্রণে আছে। লাঠিসোঁটা হাতে তারা অবস্থান নিয়ে আছেন। নিহত দুজনের একজন হলেন-সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়নের খাটিহাতা গ্রামের হাদিস মিয়া ওরফে কালন মিয়া (২৩)। তার বাবার নাম আলতাব আলী ওরফে আলতু মিয়া। নিহত ব্যক্তির বড় ভাই মাওলানা আবদুর রহিম (৩৮) বলেন, আমার ভাই পুলিশের গুলীতে ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছে। লাশ আমাদের বাড়িতে আছে।
নিহত আরেকজন হলো-উপজেলা সদরের কুট্টাপাড়া গ্রামের সুফি আলীর ছেলে আল আমীন (১২)। আহত অবস্থায় জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়ার আধা ঘণ্টা পর সে মারা যায়। কুট্টাপাড়া গ্রামের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সাদেক মিয়া ও প্রতিবেশী স্কুলশিক্ষক আল এমরান এই খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা রানা নুরুশামস হাসপাতালে শিশু আল আমীনের মৃত্যুর খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেন। একই হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক শওকত আলী দুজনের মৃত্যুর খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, তরুণের লাশ তার স্বজনেরা নিয়ে গেছেন। আর হাসপাতালে শিশুটির মৃত্যু হয়। সংঘর্ষের খবর জানালেও তাতে কারো মৃত্যুর বিষয়টি পুলিশ কিংবা প্রশাসন কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা জানান,রোববার সকাল থেকেই হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা শহরের পিকেটিং শুরু করে। হরতালকে কেন্দ্র করে বন্ধ থাকে দোকান পাটসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এছাড়াও আঞ্চলিক ও মহাসড়কে ছোট-বড় এবং দূর-পাল্লার সকল যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। সকাল ৯টা ২০ মিনিট থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম-ঢাকা ও ঢাকা-সিলেট রেলপথ বন্ধ থাকে। এর আগে ঢাকা থেকে সিলেটগামী আন্তঃনগর পারাবাত এক্সপ্রেস পৈরতলা রেলগেইটে পৌঁছলে বিক্ষোভকারীরা পিকেটাররা ট্রেনটিতে ইটপাটকেল ছুঁড়ে। একইভাবে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী সোনার বাংলা এক্সপ্রেস অবরোধের মুখে ইটপাটকেল খেয়ে পিছিয়ে ভৈরব রেলস্টেশনে গিয়ে আটকা পড়ে।
আন্তঃনগর মহানগর এক্সপ্রেস ভৈরব স্টেশনে আটকা পড়ে। এ সময় আরো বেশকটি ট্রেন আশপাশের স্টেশনে আটকা পড়ে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ শওকত হোসেন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডাঃ রানা নুরুস শামস বলেন, গেতকাল সংঘর্ষে আহত হয়ে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি মারা গেছেন। দুই চিকিৎসক গত দুদিনে গুলীবিদ্ধ ৭ জনের মৃত্যুও কথা নিশ্চিত করেছেন। তারা বলেন, শনিবার রাতে ৫ জন ও রোববার দুইজন মারা গেছেন। শনিবারের নিহতরা হলেন-সদর উপজেলার সুহিলপুর ইউনিয়নের হারিয়া গ্রামের আবদুল লতিফের ছেলে মোঃ জুর আলম-(৩৫), সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার দাবির মিয়ার ছেলে বাদল মিয়া-(৪০), সদর উপজেলার মজলিশপুর ইউনিয়নের মৈন্দ গ্রামের জুর আলীর ছেলে সুজন মিয়া-(২২), সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়নের বুধল গ্রামের আলী আহাম্মদের ছেলে কাউছার মিয়া-(২৪) ও একই এলাকার জুবায়ের-(১৪)। এর আগে গত শুক্রবার রাতে আইনশৃংখলা বাহিনীর গুলীতে আশিক-(২২) নামে এক যুবক নিহত হয়। গত তিনদিনে মৃত্যুরও সংখ্যা-৯জনে উন্নীত হয়েছে।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, দুপুর পৌনে ১২টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে সরাইল বিশ্বরোড মোড়ে খাটিহাতা হাইওয়ে থানায় হামলা করেন হরতাল–সমর্থকেরা। তারা থানায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গুলী চালান। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সরাইল সার্কেল) আনিছুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, সরাইল উপজেলায় উত্তপ্ত অবস্থা থাকলেও মহাসড়ক ছাড়া কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। হাইওয়ে থানায় হামলায় অনেক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। সেখানকার পুরো তথ্য এখনো জানা যায়নি। সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরিফুল হক বেলা পৌনে একটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, এখন পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিক’ আছে।
সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা গেছে, সরাইল বিশ্বরোড মোড়, কুট্টাপাড়া মোড়, বারিউড়া, শাহবাজপুর, বেড়তলা এবং সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক মহাসড়কের উপজেলা সদরের উচালিয়াপাড়া মোড় কালীকচ্ছ বাজার এলাকায় কয়েক হাজার মাদরাসাশিক্ষার্থী ও অন্য লোকজন লাঠিসোঁটা হাতে অবস্থান করছেন। এসব সড়কের কিছুদূর পরপর গাছের গুঁড়ি, বৈদ্যুতিক খুঁটি, গাছপালা ফেলে এবং টায়ারে অগ্নিসংযোগ করে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। হরতাল–সমর্থকরা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা–কর্মীদের সাঁটানো বিভিন্ন ব্যানার–ফেস্টুন ভাঙচুর করেন।
সিরাজদিখানের ওসি আহত: হরতাল চরাকালে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম জালাল উদ্দিন হেফাজতে ইসলামের সমর্থকদের হামলায় আহত হয়েছেন। গুরুতর অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়েছে। সিরাজদিখান থানার পরিদর্শক কামরুজ্জামান হাসপাতালে বলেন, আমরা রাস্তায় অবস্থান করছিলাম। শুলপুর এলাকায় গেলে হেফাজতের কর্মীরা আমাদের ওপর হামলা চালায়। তারা হকিস্টিক দিয়ে ওসি স্যারের মাথায় আঘাত করে। তিনি এখনও অচেতন অবস্থায় আছেন।
সর্বশেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২১, ০২:৫২
পাঠকের মন্তব্য