ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আগমনের প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলামীর নজিরবিহীন হরতালের খবর বিশ্ব মিডিয়াগুলোতে ব্যাপক প্রচার পেয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের পর দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া আন্দোলন ও হতাহতের খবর গুরুত্বসহ প্রকাশ করেছে।
ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স ‘মোদির সফরের পর বাংলাদেশে আন্দোলন, হামলা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। স্থানীয় সাংবাদিক এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হেফাজতে ইসলামের শত শত সদস্য বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে হিন্দু মন্দির এবং ট্রেনে হামলা চালিয়েছে। নরেন্দ্র মোদির দু’দিনের বাংলাদেশ সফর শেষে দেশজুড়ে এই সহিংসতা ছড়িয়েছে।
রয়টার্স বলেছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরোধিতায় হেফাজতের বিক্ষোভের সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে কমপক্ষে ১০ জন নিহত হয়েছেন। প্রাণহানির ঘটনা ঘিরে ক্ষোভ বৃদ্ধি পাওয়ায় মোদির বিদায়ের পর সহিংসতা ছড়িয়েছে সারাদেশে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর উদযাপনে অংশ নিতে দু’দিনের সফর শেষে শনিবার ঢাকা ছাড়েন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশের ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলো হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর নরেন্দ্র মোদি বৈষম্য ও নিপীড়ন চালাচ্ছেন অভিযোগ তুলে তার সফরের বিরোধিতা করে। তার সফরের মাঝেই দেশজুড়ে দ্রুতগতিতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।
শুক্রবার জনবহুল রাজধানী ঢাকায় বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে টিয়ার গ্যাস এবং রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পুলিশ। এতে কয়েক ডজন আহত হন। শনিবার ঢাকা এবং চট্টগ্রামে সড়ক অবরোধ করে হাজার হাজার হেফাজত কর্মী বিক্ষোভ-সমাবেশ করেন।
রোববার হেফাজত-ই-ইসলামের কর্মীরা দেশের পূর্বাঞ্চলীয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় যাত্রীবাহী ট্রেনে হামলা চালিয়েছে। এতে ১০ জন আহত হয়েছেন। সেখানকার এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, তারা ট্রেনে হামলা চালিয়েছে, ইঞ্জিম রুম ভাঙচুর করেছে। তারা প্রায় সব কোচ লন্ডভন্ড করেছে।
ফরাসী বার্তাসংস্থা এএফপি ‘বাংলাদেশে নতুন বিক্ষোভ থেকে সহিংসতা ছড়িয়েছে’ শিরোনামের এক প্রতিবেদনে বলেছে, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরোধিতায় টানা তৃতীয় দিনের মতো ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে কমপক্ষে এক ডজন মানুষ আহত হয়েছেন। শুক্রবার চারজন এবং পরের দিন আরও ছয়জনের মৃত্যুর পর মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশের প্রধান প্রধান বেশ কয়েকটি জেলায় ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে।
রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী শহর নারায়ণগঞ্জে নতুন করে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ ছড়িয়েছে; যেখানে হেফাজতের সমর্থকরা ঢাকা-চট্টগ্রামের সঙ্গে সংযোগকারী মহাসড়ক অবরোধ করে ‘অ্যাকশন, অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ স্লোগান দেন। এসময় বিক্ষোভকারীরা সড়কে বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র এবং টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে মোদিবিরোধী স্লোগান ও গুলীর ঘটনার তদন্তের দাবি জানান। সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানোয় পুলিশ রাবার বুলেট এবং টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীরা। পুলিশের একজন মুখপাত্র বলেছেন, বিক্ষোভকারীদের সড়ক থেকে তুলে দেওয়া হয়েছে।
এএফপি বলছে, বিক্ষোভকারীদের বেশিরভাগই ইসলামিগোষ্ঠী হেফাজত-ই-ইসলামের সদস্য। ভারতের মুসলিমদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা চালানোর অভিযোগে নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করেছে এই গোষ্ঠী। ভারতীয় সংবাদ সংস্থা ইন্দো এশীয় নিউজ সার্ভিসের (আইএএনএস) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশজুড়ে ডাকা সকাল-সন্ধ্যার হরতালের সময় রোববার হেফাজত-ই-ইসলামের কর্মীরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় কেন্দ্রীয় গণ-গ্রন্থাগারে আগুন দিয়েছেন। দূরপাল্লার কোনো বাস সড়কে চলাচল করছে না। তবে ঢাকায় রিকশা, অটোরিকশা ও বাস চলাচল করতে দেখা গেছে।
হেফাজত-ই-ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক চট্টগ্রামে এক সমাবেশে বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ সমর্থকদের ওপর পুলিশ গুলী চালিয়েছে। আমরা আমাদের ভাইদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না। এছাড়াও ভারতের প্রভাবশালী টাইমস অব ইন্ডিয়া, এনডিটিভি, টাইমস নাউ, সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যম আরব নিউজ, সিঙ্গাপুরের চ্যানেল নিউজ এশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমস-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমে হেফাজত-ই-ইসলামের দেশজুড়ে আন্দোলনের খবর প্রকাশ করা হয়েছে।
সর্বশেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২১, ০১:৪৪
পাঠকের মন্তব্য