বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নানা কিছু নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কথা বলেছেন বাংলাদেশের সফলতম ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা।
এবার দল থেকে তার বাদ পড়া ও বাদ পড়ার প্রক্রিয়া, তার অবসর না নেওয়া সংক্রান্ত বিতর্ক, বিসিবির ভূমিকা ও পেশাদারিত্বের সঙ্কট, সবকিছু নিয়ে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।
শুক্রবার প্রকাশিত ওই সাক্ষাতকারে মাশরাফি দীর্ঘ দিন পর তার দল থেকে বাদ পড়া নিয়ে মুখ খুলেছেন।
তিনি বলেছেন, আমাকে যখন দলে নেওয়া হয়নি, অনেকেই (সংবাদমাধ্যম) তখন আমার কথা জানতে চেয়েছেন। আমি তখন স্রেফ এটুকুই বলেছি যে ‘এটা পেশাদার সিদ্ধান্ত, পেশাদারভাবেই দেখছি।’ কিন্তু পরে ১৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে আমি দেখলাম, একেকজন (বিসিবির) একেকরকম স্টেটমেন্ট দিচ্ছেন। মিডিয়া তো প্রশ্ন করবেই তাদেরকে। তখন উনারা সত্যি কথাটা বললে সমস্যা ছিল না।
‘প্রথম কথা, ফিটনেস। এই রেকর্ডগুলো নিশ্চয়ই উনাদের কাছে আছে, মাশরাফি কখনও ফিটনেস টেস্টে ফেল করেছে কিনা। কিংবা বলতে পারত যে মাশরাফির ফিটনেস টেস্ট এখন আবার নাও। সেটা না নিয়ে আপনি বলছেন যে, মাশরাফি ফিটনেসে ফেল করবে! এটা তো আমার জন্য অপমানজনক।
দ্বিতীয়ত, দল ঘোষণার সময় নান্নু ভাই (প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন) বলেছেন যে, মাশরাফিকে জানানো হয়েছে। খুব স্বাভাবিকভাবে মিথ্যা কথা বললেন। তার পর দেখলাম সুমন ভাইও (নির্বাচক হাবিবুল বাশার) একই কথা বলছেন। আমার এখন কী বলা উচিত!
বাদ দিয়েছে, এটা নিয়ে প্রশ্ন নেই। বাদ দেওয়ার পর আপনারা যে জিনিস প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছেন যে ২০২৩ বিশ্বকাপ সামনে রেখে নতুনদের সুযোগ দেওয়া, এটা খুবই যৌক্তিক। আমিও এখানে একমত। আমি তো ক্যারিয়ারের শেষ দিকে। কিন্তু এটা অপ্রত্যাশিত যে, এই যুক্তির সঙ্গে পরে উনারা এসব জড়িয়ে দিলেন ‘তাকে জানানো হয়েছে… তার ফিটনেসে সমস্যা।’
মাশরাফি বলেন, আমার ধারণা, যদি ফিটনেস টেস্ট নেওয়া হয়, যারা এলিট গ্রুপের ক্রিকেটার, ১৫-২০ জনের যে স্লট আছে, তাদের অনেকের থেকে বিপ টেস্ট বলেন বা ইয়ো ইয়ো, অনেকের থেকে আমার বেশি হবে (স্কোর)। আমি জানি, আপনি টেস্ট নিতেন! না নিয়ে এসব বলছেন কেন?
এসব দেখে আমার মনে হলো, লোকের কাছে সত্যটা যাচ্ছে না এবং এক পক্ষই কেবল বলে যাচ্ছে। নান্নু ভাই ও সুমন ভাইকে আমি এটা আগেই বলে রেখেছি, “এখন আমি কথা বলছি না। তবে মিডিয়া আমাকে প্রশ্ন করলে সত্যটা কিন্তু কোনো না কোনো দিন বলব।”
তখন সুমন ভাই বলেছিলেন, “কেন, নান্নু ভাই তোকে বলেনি?” আমি বললাম, “আপনারা নাকি কম্বাইন্ডলি সিদ্ধান্ত নেবেন, তাহলে জানেন না?”
নান্নু ভাইকেও ফোন করেছিলাম। উনি বললেন, “না না, মিডিয়ায় আমি বলেছি, তোর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ (কথা) হয়েছে।” কিন্তু আপনিও জানেন, আমিও জানি, মিডিয়ায় নান্নু ভাই সৌজন্য সাক্ষাতের কথা বলেননি। বলেছেন যে “জানানো হয়েছে।” এটা তো পুরোপুরি মিথ্যে কথা।
দল থেকে বাদ দেওয়ার যে কারণ বলা হয়েছে, তা নিয়েও মতামত দেন মাশরাফি। বলেন, বাদ দেওয়ার কারণের সঙ্গে আমি একমত। বিশ্বকাপে যে পারফরম্যান্স করেছি, তার পর বাদ যাওয়ার কথা। বোর্ডকে একটা না একটা সিদ্ধান্ত নিতেই হতো। হয় আমার ওপর আরও কিছুদিন আস্থা রাখতে পারত, অথবা বাদ দিতে পারত। বাদ পড়াকে আমি কোনোভাবেই অকারণ মনে করি না।
কিন্তু এটাও ভাবেন, তার আগের তিন সিরিজ আমি সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি (তিন সিরিজের দুটিতে)। একটা বিশ্বকাপ দিয়ে তারা আমার ক্রিকেট ক্যারিয়ার মূল্যায়ন করেছে, এটা একমাত্র বাংলাদেশেই সম্ভব। আর কোথাও হয় না। ২০০৩ বিশ্বকাপে মাহেলা জয়াবর্ধনে ১৩ বা ২৩ রান করেছিল (৭ ইনিংসে ২১)। এরকম বহু ইতিহাস আছে, বিশ্বকাপ কারও না কারও খুব খারাপ গেছে।
তার পরও ধরে নিলাম ২০২৩ বিশ্বকাপ মাথায় রেখে বাদ দেওয়া হলো। কিন্তু বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া ঠিক হয়নি। কারণ আপনি মুখে বলছেন, ‘আমরা চাই, মাশরাফি মাঠ থেকে বিদায় নিক’, কিন্তু আপনার প্রক্রিয়া তো ঠিক নেই!
বিদায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অবশ্যই বিদায় নেওয়া উচিত ছিল আমার। কিন্তু বিদায় কি কেউ দিতে চেয়েছে আমাকে? সঠিকভাবে কেউ বলেছে? আমাকে তো বাদ দিয়েছেন। বিদায়ের প্রস্তাব তো দেওয়া হয়নি!
সর্বশেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২১, ১৪:১৮
পাঠকের মন্তব্য