৭১ সালের একটি দৃশ্য আজ দেখলাম: ড. জাফরুল্লাহ

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি ::

সুনামগঞ্জের শাল্লার নোয়াগাঁও গ্রামে ক্ষতিগ্রস্ত সংখ্যালঘুদের বাড়ি পরিদর্শনে আসে ভাসানী অনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান ও গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল।

মঙ্গলবার বেলা ১টার দিকে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা নোয়াগাঁও গ্রামে পৌঁছেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের সামনে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।

ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে ছিলেন- গণসংহতি পরিষদের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী, সিলেট বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এমাদ উল্লাহ মহিদুল ইসলাম শাহিন, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবু, মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের সাবেক মহাসচিব নঈম জাহাঙ্গীর, গণস্বাস্থ্যের প্রেস উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের আনন্দের দিনে সংখ্যালঘু গ্রামে দুষ্কৃতকারীদের ন্যক্কারজনক হামলা ঘটনার বিষয়ে ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ১৯৭১ সালের ধ্বংসযজ্ঞের একটি অংশের দৃশ্য আজ  দেখলাম। এটি সবচেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয়, বড় লজ্জার বিষয় এবং সবচেয়ে কলঙ্কের বিষয়। এ লজ্জা শেখ মুজিবের লজ্জা, এ লজ্জা শেখ হাসিনার লজ্জা।

তিনি বলেন, একজন অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তির জন্মদিনে তারই দলের লোকজন মসজিদের মাইক ব্যবহার করে আক্রমণ খুবই বেদনার। আমরা গ্রামের অভ্যন্তরে ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়িঘর দেখেছি, কিছু মন্দির প্রতিমা ভাংচুর করা হয়েছে তা জঘন্য অপরাধ। সরকারের কাছে আমি তদন্ত চাই, কিন্তু ঘুমন্ত কালের তদন্ত চাই না। ৭ দিনের মধ্যে তা চূড়ান্ত করতে হবে।

ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, মসজিদের মাইক ইসলামের প্রচার ও আজান ছাড়া অন্য কোন কাজে ব্যবহার করা যাবে না। অন্য ধর্মাবলম্বী মানুষের ওপর হামলা ইসলামের পরিপন্থি, ধর্মের পরিপন্থি। ইসলামে পরিষ্কার বলা আছে তাদের রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা প্রশাসনের, অনতিবিলম্বে তাদের সরিয়ে দিন।

গণসংহতি পরিষদের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী বলেন, এ এলাকার মানুষ দীর্ঘকাল ধরে সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করছেন, মসজিদের মাইক ব্যবহার করে উত্তেজিত করে সংখ্যলঘুদের ওপর হামলা বাংলাদেশের জন্য মর্মান্তিক ঘটনা। শুনেছি স্বাধীন নামের ছেলেটির জলমহাল নিয়ে এ গ্রামের সাথে পূর্বশত্রুতা ছিল। পূর্বশত্রুতার জের ও হেফাজতের উস্কানিকে কাজে লাগিয়ে স্বাধীনের নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয়।

তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী গ্রামের উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দুজনের গ্রাম থেকেই আগের দিন ও পরের দিন মাইকে আক্রমণের ঘোষণা দেয়া হয়। স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় নেতাদের জানানো হলেও প্রশাসন গ্রামবাসীকে রক্ষা করতে পারেনি, নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে, এতে আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করছি। আমি সরকারের কাছে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করছি। কেন এবং কীভাবে প্রশাসনিক গাফলতি হলো। রাজনৈতিক প্রলেপ না দিয়ে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হোক। সরকারকে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে।

সাকী বলেন, উস্কানি দিয়ে পরিকল্পিত এ ঘটনা যা দীর্ঘদিনের সম্প্রীতি নষ্ট করার ষড়যন্ত্র, প্রশাসনের গাফলতি এটা একটা বিপজ্জনক। রাজনৈতিক জায়গা থেকে সাম্প্রদায়িক হামলা দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করবে। সম্মিলিতভাবে তা মোকাবেলা করতে হবে, সংখ্যায় কম যারা তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

সিলেট বারের সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ মহিদুল ইসলাম শাহিন বলেন, ভোরবেলা এখানে আক্রমণ হলো শতভাগ সংখ্যলঘু গ্রামটি তছনছ হয়ে গেল, এখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন কোথায় ছিল। আগের দিন পার্শ্ববর্তী দুর্বৃত্তরা মাইকে ঘোষণা দিয়ে আক্রমণের হুমকি দিল। গ্রামবাসী সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক, দুই উপজেলার ইউএনও, উপজেলা চেয়ারম্যানদের জানাল। এরপরও হামলা হয় কী করে।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে স্থানীয় এমপি ড. জয়া সেনগুপ্তার উপহার- মঙ্গলবার দুপুর দেডটায় নোয়াগাঁও গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত ৯০টি পরিবারের মধ্যে প্রত্যেককে নগদ ৫ হাজার টাকা করে তুলে দেয়া হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন- শাল্লা উপজেলা চেয়ারম্যান আল আমিন চৌধুরী, দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সিরাজ উদ দৌলা, অ্যাডভোকেট সোহেল আহমেদ, পৌর মেয়র বিশ্বজিৎ রায়, যুগ্ম সম্পাদক লুৎফুর রহমান এওর মিয়া, সাবেক চেয়ারম্যান সুবল দাস, ইউপি চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদার, বিশ্বজিৎ দাস নান্টু, শাহাজাহান সরদার, সবুজ মিয়া, লালন মিয়া,কামনাশীষ রায়, জুয়েল মিয়া প্রমুখ।

আজমিরীগঞ্জ পূজা উদযাপন পরিষদ ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ৯৫টি শাড়ি, ৪৬টি লুঙ্গি, ২টি ধুতি প্রদান করে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিষদের সভাপতি জীবন ছন্দ, সেক্রেটারি বিপ্লব দেব, বাবুল রায় প্রমুখ।

এছাড়াও নোয়াগাঁও গ্রামে পরিদর্শন ও প্রতিবাদ জানায়, ছাত্র যুব ইউনিয়ন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ বিপ্লবী শ্রমিক সংহতি ও উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন।

সর্বশেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২১, ০০:৪৬
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও