দেশে করোনা সংক্রমণ আবার উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। মার্চের শুরু থেকেই প্রতি সপ্তাহে দেড়গুণ হারে সংক্রমণ বাড়ছে। প্রায় প্রতিদিনই ভাঙছে রোগী শনাক্ত ও পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্ত হারের আগের রেকর্ড। উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে মৃত্যুর সংখ্যাও। সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় গত সাত মাস বা ২১৪ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৮০৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর আগে সর্বশেষ গত বছর ২০ আগস্ট সর্বোচ্চ ২ হাজার ৮৬৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছিল।
এমনকি উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে সংক্রমণের হারও। গতকাল পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার প্রায় ১০০ দিন পর ১১ শতাংশের ওপরে উঠেছে। মৃত্যু নিয়েও উৎকণ্ঠা বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩০ জন রোগী মৃত্যুবরণ করেছেন, যা গত ৭৪ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে সর্বশেষ গত ৭ জানুয়ারি এর চেয়ে বেশি ৩১ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছিল।
অবশ্য সংক্রমণ, শনাক্ত ও মৃত্যুর রেকর্ডের পাশাপাশি গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে এই প্রথমবারের মতো সর্বোচ্চসংখ্যক ২৫ হাজার ১১১ জনের করোনা পরীক্ষার রেকর্ড হয়েছে। যদিও এ পরীক্ষা সংক্রমণ হার বোঝানোর জন্য সঠিক চিত্র নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এ পরীক্ষার ৫০ শতাংশই স্ক্রিনিং টেস্ট।
সংক্রমণের এমন পরিস্থিতিকে ‘অ্যালার্মিং’ বা ‘উদ্বেগজনক’ বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, মার্চের আগে দেশে ক্লাস্টার বা গুচ্ছ ও বিক্ষিপ্ত সংক্রমণ থাকলেও মার্চের শুরু থেকে দেশে আবার কমিউনিটি সংক্রমণ শুরু হয়েছে। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা না গেলে দেশের করোনা পরিস্থিতি আবার আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারে। এজন্য তারা লকডাউনের পরিবর্তে বেশি সংক্রমিত এলাকা বা স্থানে ‘মপ-আপ’ বা সুনির্দিষ্ট মানুষদের পরীক্ষা, রোগী শনাক্ত, আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইন এবং নিয়ন্ত্রিত যাতায়াতের পরামর্শ দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে করোনা মোকাবিলায় সরকারের গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি অবশ্যই ‘অ্যালার্মিং’। কারণ পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার ১১ শতাংশে উঠে গেছে।
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ঢালাওভাবে ব্যবস্থা না নিয়ে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এখন ঢালাও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া ঠিক হবে না। এখন আমাদের লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করেন সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। সুনির্দিষ্ট স্থান, সুনির্দিষ্ট প্রতিস্থান, সুনির্দিষ্ট এলাকা সেখানে যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে হবে। সেখানে জানালা-দরজা খোলা রাখতে হবে। এয়ার ভেন্টিলেশন চালু করতে হবে। সব জায়গায় মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন কর্মস্থল, হোটেল-রেস্টুরেন্টে এখন এক-তৃতীয়াংশ মানুষ থাকতে পারবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ইতিমধ্যেই জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও সামাজিক অনুষ্ঠানাদি নিয়ন্ত্রণ করতে জেলা প্রশাসকদের চিঠি দিয়েছে। সেভাবে কাজও শুরু হয়েছে। রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় মাস্ক নিশ্চিত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত নামছে। ইতিমধ্যেই পুলিশ তদারকি করা শুরু করেছে। তবে সবাইকে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র এবং রোগতত্ত্ব বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, গত কয়েক দিন ধরেই সংক্রমণ বাড়ছে। প্রতিদিনই প্রায় সংক্রমণের আগের রেকর্ড ভাঙছে। এ সংক্রমণ বাড়ার মূল কারণ মানুষ এখন বেপরোয়া হয়ে গেছে। কেউ মাস্ক পরে না। যতক্ষণ পর্যন্ত মাস্ক পরাতে না পারব, ততক্ষণ পর্যন্ত সংক্রমণ কমানো যাবে না। মাস্ক পরতে হবে। জনসমাবেশ বন্ধ করতে হবে। যেখানে নেহাত না গেলেই নয়, সেখানে মাস্ক পরা, একজনের থেকে আরেকজন তিন হাত দূরে থাকা ও সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়া বা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দরকার। কোনো মিলনায়তন বা হলে যদি ৩০০ লোকের ধারণক্ষমতা থাকে, সেখানে ১০০ লোকের বেশি ঢুকতে দেওয়া যাবে না। এসি বন্ধ করে জানালা-দরজা খুলে দিতে হবে। তাহলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। কারণ রোগটি মানুষের থেকে মানুষে ছড়ায়।
বাড়ছে রোগী, সংক্রমণ হার ও মৃত্যু : গত বছর মার্চে দেশে প্রথম করোনা শনাক্তের পর জুন, জুলাই ও আগস্টে ভাইরাসটির সংক্রমণ সর্বোচ্চ মাত্রায় ছিল। তখন মাত্র তিন দিন ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত চার হাজারের সামান্য ওপরে উঠেছিল এবং বেশ কয়েক দিন তিন হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়। আগস্টের শেষদিক থেকে সংক্রমণ কমতে শুরু করে। নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত দৈনিক শনাক্ত দুই হাজারের নিচে নেমে আসে। নভেম্বরের শেষদিকে ও ডিসেম্বরের প্রথম ভাগে সংক্রমণ কিছুটা বাড়লেও শনাক্ত আড়াই হাজারের মধ্যেই ছিল। মধ্য ডিসেম্বর থেকে সংক্রমণ আবার কমতে শুরু করে এবং গত ফেব্রুয়ারির শেষদিন পর্যন্ত নিম্নমুখী ছিল। সে মাসে দৈনিক ৩০০-৪০০ রোগী পাওয়া গেছে। কিন্তু মার্চের প্রথম দিন থেকে সংক্রমণ আবার বাড়তে শুরু করে। বাড়তে বাড়তে গত ২৪ ঘণ্টায় দৈনিক রোগী শনাক্ত আড়াই হাজার ছাড়িয়ে সাত মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যায় পৌঁছায়।
গত কয়েক দিন ধরে করোনায় মৃত্যুও বাড়ছে। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় ৩০ জন করোনায় মারা গেছেন, যা গত ৭৪ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে সর্বশেষ গত ৭ জানুয়ারি এর চেয়ে বেশি ৩১ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছিল। গত ফেব্রুয়ারিতে যেখানে প্রতিদিন প্রায় ১০ জন করে করোনা রোগী মারা যান, সেখানে গত ১০ দিনে প্রতিদিন গড়ে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ায় ২০ জনের বেশি।
এমনকি গত ২৪ ঘণ্টায় ১১ দশমিক ১৯ শতাংশ হারে রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা গত ১০১ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে সর্বশেষ গত বছর ১১ ডিসেম্বর এর চেয়ে বেশি হারে রোগী শনাক্ত হয়েছিল। ওইদিন ১১ দশমিক ৫৪ শতাংশ হারে ১ হাজার ৮৮৪ জন রোগী শনাক্ত হয়েছিল। গত ফেব্রুয়ারিতে তিন শতাংশের কম হারে রোগী শনাক্ত হয়েছিল।
সংক্রমণ বাড়ার কারণ কী : অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, শীতকালে যে সংক্রমণ কম ছিল, শীত কমার সঙ্গে সঙ্গে তা বেড়েছে। কারণ শীতকালে অন্যান্য ভাইরাস দেহের সংক্রমণ ট্র্যাক দখল করেছিল। এখন সেগুলো না থাকায় করোনাভাইরাস সেই জায়গা দখল করেছে। মানুষ বেশি সংক্রমিত হচ্ছে। তবে গত বছরের মতো এবার করোনার সংক্রমণ অত বাড়বে না। কারণ অনেক মানুষের মধ্যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে।
এ বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দেন, স্বাস্থ্যবিধি মানা প্রত্যেকের জন্য খুবই জরুরি। প্রত্যেকের মাস্ক বাধ্যতামূলক করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনবোধে সরকারকে আইন প্রয়োগ করতে হবে। কিছু কিছু জায়গায় মাস্ক পরতে দেখা যাচ্ছে। সেটা সারা দেশে করতে হবে। কারণ সারা দেশেই ভাইরাস ছড়িয়েছে।
ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, সব দেশেই এরকম দেখা গেছে যে সংক্রমণ নেই বা যখন কমে গেছে তখন ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠান শুরু করে। এখানেও তাই হয়েছে। আমরা বদ্ধ ঘরে ঝুঁকিপূর্ণ জমায়েত করেছি। সেখান থেকে সংক্রমণ বেড়ে গেছে। এখন যেসব রোগী হাসপাতালে আসছে, তাদের অধিকাংশের মধ্যেই করোনা পজিটিভ পাওয়া যাচ্ছে। এসব লোকজন এতদিন পরীক্ষা না করে মৃদু লক্ষণ নিয়ে রোগটি ছড়িয়েছে। ভেরিয়েন্ট সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। তবে সেটা পরীক্ষা না করে বলা যাবে না।
কমিউনিটি সংক্রমণ শুরু হয়েছে : করোনা আবারও কমিউনিটিতে ছড়িয়েছে কি না জানতে চাইলে অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, কত মানুষের মধ্যে অ্যান্টিবডি হয়েছে, সেটা বিশ্লেষণ করলে বোঝা যাবে। তবে সব কমিউনিটিতে ছড়ায়নি। এটা হয়তো শহরে বেশি ছড়িয়েছে।
অবশ্য ইতিমধ্যেই করোনা আবারও কমিউনিটিতে ছড়িয়েছে বলে মনে করেন ডা. মুশতাক হোসেন। তিনি বলেন, যখন পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার ৫ শতাংশের ওপরে ছিল, তখন ক্লাস্টার বা গুচ্ছ গুচ্ছ সংক্রমণ ছিল। মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে কমিউনিটি সংক্রমণ শুরু হয়েছে। যদি ২ শতাংশের নিচে যায় তা হলে বিচ্ছিন্ন বা বিক্ষিপ্ত সংক্রমণ, অর্থাৎ সব জায়গায় ছড়ায়নি। সংক্রমণ যদি চার সপ্তাহ শূন্য শতাংশের ঘরে থাকত, তাহলে বাংলাদেশ বলতে পারত এখানে সংক্রমণ নেই। সেখানে আমরা যেতে পারিনি। এখানে ক্লাস্টার সংক্রমণ হয়েছে। এখন আবার কমিউনিটিতে সংক্রমণ হচ্ছে।
অবশ্য পরিস্থিতি ‘অ্যালার্মিং সিচুয়েশন’ বা আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে বলে মনে করেন এ বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। তৃতীয় সপ্তাহে প্রবেশ করল। এখনো বাড়ছে। এর আগে নভেম্বরে বাড়তে শুরু করেছিল। কিন্তু দুই সপ্তাহ পর নেমে গিয়েছিল। এখন ক্রমান্বয়ে বাড়ার তৃতীয় সপ্তাহের তৃতীয় দিন পার হয়েছে। সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত রয়েছে। কাজেই ‘অ্যালার্মিং’ তো বটেই।
তবে এখনো দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ বলা যাবে না বলে মনে করেন এ বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিতীয় ঢেউ বলা যাবে না। পরপর চার সপ্তাহ যদি প্রতি সপ্তাহে দেড়গুণ করে শনাক্তের হার বা পজিটিভিটি রেট বাড়ে বা প্রতি সপ্তাহে ১ হাজার ৬০০ জন করে রোগীর সংখ্যা হয়, তাহলে দ্বিতীয় ঢেউ বলা যাবে। এখন প্রতি সপ্তাহে তিন হাজার থেকে চার হাজার করে রোগী পাওয়া যাচ্ছে। সর্বোচ্চসংখ্যক রোগী পাওয়া গিয়েছিল ৩ হাজার ২০০-এর বেশি। সেটা ছিল প্রথম ঢেউ। সেই সংখ্যার অর্ধেক যদি প্রতি সপ্তাহে বাড়ে, তাহলে দ্বিতীয় ঢেউ বলা যাবে। এখন সংক্রমণের লক্ষণগুলো দ্বিতীয় ঢেউয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে নভেম্বরের মতো যদি কমে যায়, তাহলে বলতে হবে ছোট একটি তরঙ্গ অতিক্রম করল। আর তা না হলে ঢেউ-ই বলতে হবে।
বর্তমান পরীক্ষা সংক্রমণের সঠিক চিত্র নয় : সর্বোচ্চ পরীক্ষার ব্যাপারে ব্যাখ্যা দিয়ে ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, বর্তমানে পরীক্ষার একটা বড় অংশ প্যারেড গ্রাউন্ডে যারা দায়িত্ব পালন ও যোগদান করছে, ৪৮ ঘণ্টা পরপর তাদের আরটি-পিসিআর টেস্ট করা হচ্ছে। এদের হিসাব বাদ দিলে শনাক্তের হার আরও বেশি। কারণ প্যারেড গ্রাউন্ডে যারা যাচ্ছেন, তাদের মধ্যে করোনার পজিটিভিটি হার কম। পাশাপাশি বিমানযাত্রীদেরও যে পরীক্ষা করা হচ্ছে, তাদের মধ্যেও করোনার পজিটিভ হার কম। বিমানযাত্রী ও প্যারেড গ্রাউন্ডের অনুষ্ঠানের লোকজনের পরীক্ষা বাদ দিলে সন্দেহজনক করোনা নিয়ে আসছে, এমন সংখ্যা ৮-১০ হাজার। এই ১০ হাজারের মধ্যে পজিটিভিটি রেট ১১ শতাংশের চেয়ে অনেক বেশি। যারা রোগের লক্ষণ নিয়ে আসে সার্ভিলেন্সে সেই সংখ্যাটাই যোগ হয়। এর মধ্যে ৫ শতাংশ অন্যান্য পরীক্ষা আসতে পারে। কিন্তু বর্তমানে মোট পরীক্ষার ৫০ শতাংশই স্ক্রিনিং টেস্ট। এ স্ক্রিনিং টেস্ট সংক্রমণের পজিটিভিটির পরিসংখ্যান নয়।
দরকার মপ-আপ, সুনির্দিষ্ট স্থানে বিশেষ ব্যবস্থা : পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এখন কী করা দরকার জানতে চাইলে অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, সারা দেশের সব জায়গায় সংক্রমণ ১১ শতাংশ হয়নি। কোনো জায়গায় ৫ শতাংশ, কোনো জায়গায় ৩ শতাংশ, কোথাও ১৫ শতাংশ বা ১১ শতাংশ হয়েছে। গড়ে ১১ শতাংশ। যেসব জায়গায় সংক্রমণ বেশি হয়েছে, সেখানে ‘মপ-আপ’ করতে হবে। ওইসব জায়গায় রোগীদের শনাক্ত করে সংক্রমণ কমাতে হবে। যেখানে বেশি সেখানে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে।
ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, প্রথম কাজ রোগীদের শনাক্ত করে আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইন করা। সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তামূলক কর্মসূচি নিলে পরীক্ষার সংখ্যা বাড়বে ও রোগী শনাক্ত হবে। যাদের মৃদু লক্ষণ তারা খুব অসুস্থ হলে হাসপাতালে আসছে। তার আগে রোগটা ছড়াচ্ছে। এ মৃদু লক্ষণের লোকজনকে যদি শনাক্ত করা হয়, তাহলে আর রোগটা ছড়াবে না। এজন্য অসচ্ছল মানুষকে আর্থিক সহায়তা করতে হবে। তবেই তাদের কোয়ারেন্টাইন করা যাবে।
তিনি বলেন, এক বছর পর এখন পুরো বাংলাদেশ লকডাউন করা যাবে না। সংক্রমিত যারা হচ্ছেন, তাদের মধ্যে যাদের অবস্থা খারাপ, তারা হাসপাতালে আসছেন। আর যাদের মৃদু লক্ষণ তাদেরও মেডিকেল ফলোআপ করা দরকার। খারাপ অবস্থা হওয়ার আগেই যেন তারা হাসপাতালে আসতে পারেন।
সংক্রমণ কমাতে কাজ করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র এবং রোগতত্ত্ব বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে যারা রাঙ্গামাটি, কক্সবাজার ঘুরে এসেছে, তাদের মধ্যেই রোগটি দেখা দিচ্ছে। তাদের থেকেই রোগটি ছড়াচ্ছে। করোনার শুরুর দিকে মার্চের শেষের দিকে মানুষ রাস্তায় নামত না। ছাদেও যেত না। অথচ সেই লোকজনের এখন কোনো টেনশন নেই। মাস্ক পরছে না।
এ কর্মকর্তা বলেন, আমরা জেলা প্রশাসনদের বলেছি বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, সামাজিক অনুষ্ঠানাদি, ধর্মীয় অনুষ্ঠান সীমিত আকারে করতে। সেটা বিভিন্ন জেলায় চালু হয়েছে। চট্টগ্রামে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে ১০০ জনের বেশি কোনো অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিতে পারবে না। কঠোর বিধিনিষেধ দেওয়া যাবে না। বাজার অস্থিতিশীল হবে। এখন স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে নজরদারি বেড়েছে। সামনের দিনগুলোতে আরও বাড়বে।
বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, এখন ঊর্ধ্বগতিতে আছে। পরিস্থিতি উদ্বেগজনক বলব না। তবে পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে বাড়তি মনোযোগ আকর্ষণ করে।
সর্বশেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২১, ১৬:৩৩
পাঠকের মন্তব্য