ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও করোনায় আক্রান্ত

মুক্তিবাণী অনলাইন ডেস্ক :

করোনা নিয়ন্ত্রণে দেশে জাতীয়ভাবে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম চলছে ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নেওয়ার পর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি খুবই স্বাভাবিক একটি ঘটনা। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর তিন সপ্তাহের মধ্যে যে কারও মাঝে করোনা পাওয়া যেতে পারে। আর তাই ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। মূলত ভ্যাকসিন নেওয়ার পর ত্রাণ সচিবের করোনা আক্রান্ত হওয়ার খবরে আতংক ছড়িয়ে যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে যদি কারও মাঝে সংক্রমণ পাওয়া যায় তবে সেটিতে মৃত্যুঝুঁকি কম থাকে। ভ্যাকসিনের সম্পূর্ণ কার্যকারিতা বা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পরেও একটি নির্ধারিত সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আর এ সময় সংক্রমণ এড়ানোর জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা খুবই জরুরি।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান খসরু বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন যে ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করা হচ্ছে সেটি গড়ে মোটামুটি ১০০ জনের মাঝে ৭০ থেকে ৮০ জনকে সংক্রমণ থেকে নিরাপত্তা দেবে। ২০ শতাংশের সম্ভাবনা থাকবে কোভিড আক্রান্ত হওয়ার। আর এজন্যেই কিন্তু সবাইকে বলা হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য।

তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত যে গবেষণা ফলাফল পাওয়া গেছে তা দেখে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ১০ থেকে ১২ সপ্তাহ পরে দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগ করা উচিত। বাংলাদেশে যেহেতু আট সপ্তাহ পরে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে তাই বলা যায় সেটি নেওয়ার দুই সপ্তাহ পরে তার মধ্যে একটা সুরক্ষাবলয় তৈরি হবে।

শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ্বের আরও ৯৭টি দেশে বর্তমানে ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে অনেক দেশেই ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নেওয়ার পরে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সুস্থ হয়ে ওঠার সংবাদও পাওয়া গেছে।

ভারতের ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু করার পরে মহারাষ্ট্রের বি ওয়াই এল নায়ার হাসপাতালে কর্মরত একজন ৪৬ বছর বয়সী চিকিৎসক প্রথম ডোজ নেওয়ার ৯ দিন পর করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। তবে খুব দ্রুতই তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। হাসপাতালটির দায়িত্বে থাকা রমেশ ভার্মাল ২০ ফেব্রুয়ারি ভারতের গণমাধ্যমকে জানান, ওই চিকিৎসক এখন সুস্থ। শিগগিরই তিনি কাজে যোগ দেবেন। কেবল ভারত নয়, বিশ্বের অন্যান্য দেশেও ভ্যাকসিন গ্রহণের পরে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ শনাক্ত হলেও যারা ভ্যাকসিন নিয়েছে তাদের মৃত্যুঝুঁকি অনেকাংশেই কমিয়ে দেয় এই ভ্যাকসিন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখন পর্যন্ত তিনটি ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিয়েছে। এর মধ্যে সবার আগে ফাইজারের ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে মার্কিন কোম্পানি মডার্নার উদ্ভাবিত করোনার ভ্যাকসিন অনুমোদন দেওয়া হয়। সর্বশেষ অনুমোদন পেয়েছে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন।

ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু হওয়ার পরে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও কোভিড-১৯ সংক্রমণের তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া ইসরায়েলসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশেও কোভিড-১৯ সংক্রমণ পাওয়া গেছে প্রথম ডোজ নেওয়ার পরে।

সম্প্রতিকালে ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের ইমিউনোলজিস্ট অধ্যাপক ড্যানি অল্টম্যান জানিয়েছেন, এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তিনি এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে জানান, ভ্যাকসিন দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে আজীবনের জন্য মুক্ত থাকা যাবে- এমনটা কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এখন পর্যন্ত বলা হয়নি। এমনকি প্রথম ডোজ দেওয়ার পর থেকেই শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হবে- এমনটাও বলা হয়নি। এক্ষেত্রে প্রথম ডোজের পরে দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে অ্যান্টিবডি তৈরি হতে। এ সময়টাতে যে কেউ কোভিড-১৯ সংক্রমিত হতে পারে যদি স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলে। তাই সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতেই হবে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (সিডিসি) বলছে, ভ্যাকসিন নেওয়ার কারণে কেউ কোভিড-১৯ আক্রান্ত হবে না। কারণ এখন পর্যন্ত বিশ্বে যতগুলো ভ্যাকসিন অনুমোদন দেওয়া হয়েছে তার কোনোটিতেই জীবন্ত ভাইরাস নেই। আর এ কারণে ভ্যাকসিন নেওয়ার কারণে কোভিড হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলেই প্রমাণিত হয়েছে।

সম্প্রতি স্কটল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব এডিনবরা পরিচালিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেওয়ার চার সপ্তাহের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকি কমে ৯৪ শতাংশ। ফাইজার ও বায়োএনটেকের উদ্ভাবিত ভ্যাকসিন এই ঝুঁকি কমায় ৮৫ শতাংশ। গবেষণায় পুরো স্কটল্যান্ডের ৫৪ লাখ জনসংখ্যার তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণার জন্য গত ৮ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এ সময়ের মধ্যে স্কটল্যান্ডের ১১ লাখ ৪ হাজার মানুষকে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়। এর মধ্যে স্কটল্যান্ডের ২১ শতাংশ জনগণ ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নেন। এতে দেখা যায়, সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা ৮০ বছরের বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন নেওয়ার চার সপ্তাহ পরে হাসপাতালে ভর্তি ৮১ শতাংশ কমে গেছে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য ফাইজার ও অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করার পরবর্তী ফলাফলই একত্র করে হিসাব ধরা হয়েছে।

স্কটল্যান্ডের জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা জিম ম্যাকমেনামিন বলেন, গবেষণায় যে ফল পাওয়া গেছে, তা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আমরা এখন ভ্যাকসিন থেকে প্রত্যাশার পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেতে শুরু করেছি।

সর্বশেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১, ০০:২৪
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও