নেতাকর্মীদের আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান বিএনপি নেতাদের

নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার বরিশাল জিলাস্কুল মাঠে কেন্দ্র ঘোষিত বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশের একাংশ
নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার বরিশাল জিলাস্কুল মাঠে কেন্দ্র ঘোষিত বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশের একাংশ
মুক্তিবাণী অনলাইন ডেস্ক :

সরকার পতনের আন্দোলনের জন্য দলের সকল নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রস্তুতি নেয়ার জন্য আহবান জানিয়েছেন বিএনপিরর নেতারা। তারা বলেছেন, যারা দেশের জন্য প্রাণ বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন তারাই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। যারা যুদ্ধকালীন সময় হিন্দুদের ঘরবাড়ি লুটপাট-নির্যাতন করেছে, নিজেদের আত্মীয়-স্বজনদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করেছে, তারা তো মুক্তিযোদ্ধা হতে পারো না। এসময় বর্তমান সরকারকে হটাতে কঠোর আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানান তারা। 

গতকাল বৃহস্পতিবার বরিশাল জিলা স্কুল মাঠে নির্দলীয় নিরেপেক্ষ সরকারের দাবিতে বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশে এ আহ্বান জানান তারা।

পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী বৃহস্পতিবার দুপুর দুইটায় বরিশাল শহরের জিলা স্কুল মাঠে সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এ সমাবেশ শুরু হয় বিকাল তিনটায়। সমাবেশকে ঘিরে এদিন সকাল থেকেই সারা শহরে বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

এ সময় শহরের মরকখোলা পুল, নতুন বাজার টেম্পু স্ট্যান্ডের মোড়, জেল খানার মোড়, আমতলার মোড়, হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা, কাকলী মোড় ও গীর্জা মহল্লার মোড়সহ বিভিন্ন জায়গায় ব্যারিকেড বসিয়ে তল্লাশি চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এদিন সকালে রাজধানী ঢাকা থেকে বরিশালের উদ্দেশ্যে বিএনপির নেতাকর্মীরা গাড়ি বহর নিয়ে রওনা হন। পথিমধ্যে মাওয়া ফেরিঘাটে বিএনপির গাড়ি বহর আটকে দেয় ফেরি কর্তৃপক্ষ। ঘাটে গাড়ি বহর আসলে ফেরি কর্তৃপক্ষ তাদের অফিস বন্ধ করে চলে যায়। পরে লঞ্চে করে নেতাকর্মীদের নিয়ে পদ্মা পাড় হন বহরের নেতৃত্বে থাকা বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ও সর্বশেষ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন।

সমাবেশে মেজর হাফিজ বলেন, মুক্তিযোদ্ধা হবে জিয়াউর রহমানের মতো। যার একটা বাড়ি নেই, গাড়ি নেই ও ব্যাংক ব্যালেন্স নেই। আমরা কি তার সেই আদর্শ ধরে রাখতে পেরেছি আজকে? নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন। আমরা জিয়াউর রহমানের আদর্শ ধারণ করি কি-না? আমাদের মধ্যে দেশপ্রেম সততা আছে কি-না।

তিনি বলেন, পার্শ¦বর্তী দেশ মায়ানমারে সামরিক শাসকরা ক্ষমতা দখল করেছে। দেড় লক্ষ মানুষ রাস্তায় নেমে এসে আন্দোলন করছে। আওয়ামী লীগের শাসন তো সামরিক শাসনের চাইতেও খারাপ। আমরা কয়জন রাজপথে নেমে এসেছি? মিয়ানমারের লক্ষ মানুষ রাজপথে নেমে এসেছে। কালকে বিবিসিতে আরেকটি সংবাদ দেখলাম, মিয়ানমারে আন্দোলনরতদের সমর্থন দিয়ে জার্সি পরিবর্তন করে জনতার কাতারে মিশে গিয়েছে। আমাদের পুলিশ ভাইয়েরা কি করেছেন?

সেনাবাহিনীর প্রধানের সমালোচনা করে মেজর হাফিজ বলেন, সেনা প্রধানের ভাই আল জাজিরাতে কি বলেছেন? আমার আর গুন্ডার দরকার নাই, পুলিশ থাকতে গু-ার দরকার নেই। পুলিশইতো আমার বড় গু-া। লজ্জা হয় না আপনাদের ইউনিফর্ম পরতে কিসের দেশ কোন দেশে চাকুরী করছেন। এই দেশ আমরা রক্ত দিয়ে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীন করেছি। জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে পরাজিত করেছি।

মেজর হাফিজ বলেন, এখানে যারা এসেছেন তারা নিজ নিজ এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয়, আমি দেখেছি। তাদের যে জনপ্রিয়তা তা আমরা দেখেছি। এজন্য আজকে তাদের সমাবেশ করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছি। আমাদের ভোটাধিকারের মূল্য নাই সেই মূল্য প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করেছি। যারা যারা শরণার্থী ছিল তারা এসে বাংলাদেশ দখল করে সেখান থেকে হারিয়ে গিয়েছে। শরণার্থী ছিলো তারা এসে বাংলাদেশ দখল করেছে। আর মুক্তিযোদ্ধারা হারিয়ে গেছে। এই হলো আজকের বাংলাদেশ। এখানে মুক্তিযোদ্ধা হওয়া খুব সোজা। একটা কালো কোর্ট পরলেই মুক্তিযোদ্ধা হওয়া যায়। তাদের আমাদের মত কামান গুলী খেতে হয়না।

হাফিজ বলেন, এই সরকারের ১৫-১৬ জন সচিব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রমাণিত হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সরকার কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তিনি বলেন, আমরা একটি নিকৃষ্ট সরকারের অধীনে বসবাস করছি। এখানে আমাদের কোন অধিকার নেই। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধানের অনেক বক্তব্য আমরা শুনেছি। এই সেনাবাহিনী আমরা গঠন করেছিলাম মাত্র ২৫ জন সেনা পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে বিদ্রোহ করে। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। প্রত্যেক বাঙালীর কাছে অত্যন্ত প্রিয় এই সেনাবাহিনী। এসময় তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, এখানে স্লোগান দেয়ার জন্য আসবেন না। স্লোগান দিয়ে আমাদের মিটিং নষ্ট করবেন না। স্লোগান দেয়ার জন্য রাজপথ। আর যদি প্রতিরোধ করতে হয় রাজপাথে গিয়ে সন্ত্রাসী বাহিনীকে প্রতিরোধ করুন। আগুন জ্বালাতে হলে শেখ হাসিনার গদিতে আগুন জ্বালান। আমাদের এখানে আগুন জ্বালিয়ে সমাবেশ নষ্ট করার দরকার নেই।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, সমস্ত সিটি নির্বাচনগুলোকে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করার স্বপ্ন দেখছে সরকার। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারেরর অধীনে নির্বাচন চাই, মাফিয়া সরকারের অধীনে নয়।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, বিচার বিভাগ আর প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর আলাদা কিনা সেটা জানতে চাই। আমরা নির্বাচন কমিশনকে পদত্যাগ চাই এবং নির্বাচন ব্যবস্থায় আমুল পরিবর্তন চাই।

খুলনা সিটি করপোরেশনের নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ৬ সিটি করপোরেশনের প্রার্থীদের নিয়ে তারেক রহমানের নির্দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে সমাবেশ শুরু করেছি আমরা। মাফিয়া সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তাই শেখ হাসিনার অধীনে আর কোন নির্বাচনে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।

বরিশাল বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন বলেন, ‘চোর না শোনে ধর্মের কাহিনি, আজ চোরচোট্টা দিয়ে দেশ চালানো হচ্ছে। সমাবেশস্থলে আসতে আজ পথে পথে বাধা দেয়া হচ্ছে। নেতাকর্মীদের মারধর করা হচ্ছে। ভোলা নেতাকর্মীদের আসতে দেয়া হয়নি। সমাবেশস্থল ঘিরে রেখেছে পুলিশ। তারপরও নেতাকর্মীদের দমিয়ে রাখা যায়নি।’

ঢাকা সিটি উত্তর করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী তাবিথ আউয়াল বলেন, ‘দিন দিন জালিম সরকার স্বাভাবিক নির্বাচন হতে দিচ্ছে না। কোন নির্বাচনে ভোটাররা ভোট দিতে পারছে না। বর্তমান আওয়ামী সরকার বলে তারা দুর্নীতির সঙ্গে আপস করে না কিন্তু তারা দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন।’

ইশরাক হোসেন বলেন, ‘আজকে সমাবেশে আসার জন্য ঢাকা থেকে রওনা দেয়ার পর মাওয়া ঘাটে সরকার নির্লজ্জভাবে, ন্যাক্কারজনকভাবে ফেরি বন্ধ করে দেয়, কর্তৃপক্ষ অফিস বন্ধ করেই চলে যায়। আমাদের প্রায় ২৫ টি গাড়ি এখনো সেখানে রয়ে গেছে। আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে আছি। আমাদেরকে কোনো বাধা-ই আটকাতে পারবে না।’

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনারা যেভাবে মাঠে আছেন, গত ১৩ বছর ধরে অত্যাচার, নির্যাতন, মামলা হামলার শিকার হয়ে যেভাবে মাঠে আছেন, আপনাদেরকে দেখে আমি আরও উজ্জীবিত হলাম। আপনারা আগামী আন্দোলন সংগ্রামের জন্য প্রস্তুতি নিন। ইনশাল্লাহ বরিশাল থেকেই সরকার পতনের আন্দোলন পাকাপোক্ত হবে।’

বরিশাল মহানগরের সাবেক মেয়র মজিবুর সারোয়ারের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, বিএনপি নেতা আবুল হোসেন খান, ওবায়দুল আকরাম, আলমগীর হোসেন প্রমুখ।

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মামুন খান, যুগ্ম সম্পাদক এবিএম মাহমুদ আলম সর্দার, সহ সাধারন সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, কেএম সাখওয়াত হোসাইন, এজাজ শাহ, বরিশাল মহানগর ছাত্রদলের সাধারন সম্পাদক হুমায়ুন কবির, সিনিয়র সহ সভাপতি তরিকুল ইসলাম তরিক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শ্রমিক দলের সিনিয়র সহ সভাপতি সুমন ভঁইয়া, ছাত্রদল নেতা সালেহ আদনান, মোঃ রুবেল (আদিব), বরিশাল জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা ফরিদ জোমাদার প্রমুখ।

সর্বশেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০২১, ১৪:০৮
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও