ডিএসসিসির দোকান উচ্ছেদ অভিযানের বিরোধিতায় সাবেক মেয়র খোকন

ঢাকা দক্ষিণ সিটির বিভিন্ন মার্কেট হতে উচ্ছেদ হওয়া ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিকদের মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেন ঢাকা দক্ষিণের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন
ঢাকা দক্ষিণ সিটির বিভিন্ন মার্কেট হতে উচ্ছেদ হওয়া ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিকদের মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেন ঢাকা দক্ষিণের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন
মুক্তিবাণী অনলাইন ডেস্ক :

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন ওই সিটির সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। সিটি করপোরেশনের উচ্ছেদ অভিযানে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানিদের পুনর্বাসনের দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধনে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। গতকাল শনিবার দুপুরে হাইকোর্ট এলাকায় কদম ফোয়ারার সামনে এ মানববন্ধন হয়।

ফুলবাড়িয়া মার্কেটে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ‘অবৈধ’ দোকান উচ্ছেদের বিরোধিতা করে উচ্ছেদ হওয়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়েছেন সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন। এই মানববন্ধন কর্মসূচিতে তিনি ঢাকা দক্ষিণের বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের সমালোচনাও করেন।

গত কয়েক বছরে সেখানে নকশাবহির্ভূতভাবে ৯১১টি দোকান তৈরি করা হয়েছিল বলে ডিএসসিসির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, যখন মেয়র ছিলেন সাঈদ খোকন। উচ্ছেদ অভিযানের পর সাঈদ খোকনসহ সাতজনের বিরুদ্ধে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা নেওয়ার অভিযোগে ব্যবসায়ীদের মধ্য থেকে মামলাও হয়েছে।

সাঈদ খোকন অভিযোগ করে বলেন, ‘তাপস দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের শত শত কোটি টাকা তার নিজ মালিকানাধীন মধুমতি ব্যাংকে স্থানান্তরিত করেছেন এবং শত শত কোটি টাকা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লাভ হিসেবে গ্রহণ করছেন। অন্যদিকে, অর্থের অভাবে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গরিব কর্মচারীরা মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছেন না। সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।’ এ ধরনের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে মেয়র সিটি করপোরেশন আইন ২০০৯, দ্বিতীয় ভাগের দ্বিতীয় অধ্যায়ের অনুচ্ছেদ ৯ (২) (জ) অনুযায়ী মেয়র পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন সাঈদ খোকন।

সাবেক এই মেয়রের ভাষ্য, ‘তাপস মেয়র হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে গলাবাজি করে চলেছেন। আমি তাঁকে বলব, রাঘববোয়ালের মুখে চুনোপুঁটির গল্প মানায় না। দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন করতে হলে সর্বপ্রথম নিজেকে দুর্নীতিমুক্ত করুন। তারপর চুনোপুঁটির দিকে দৃষ্টি দিন।’

সাঈদ খোকন বলেন, ফুলবাড়িয়া মার্কেটে সিটি করপোরেশন কর্তৃক যে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে, আমি আগেও বলেছি এটা সম্পূর্ণভাবে অবৈধ।’ সাঈদ খোকন আরও বলেন, ‘মহামান্য আদালত কর্তৃক নির্দেশিত হয়ে ব্যবসায়ীদের বৈধকরণের আবেদন নিষ্পত্তির লক্ষ্যে আমরা করপোরেশনের ভোট সভায় সর্বসম্মতিক্রমে আলোচিত মার্কেটগুলোর নকশা সংশোধন বকেয়া ভাড়া আদায় সাপেক্ষে বৈধ ব্যবসা পরিচালনার অনুমতি প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি।

বোর্ড সবার সিদ্ধান্ত মোতাবেক সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ নকশা সংশোধন করে এবং রাজস্ব বিভাগ সাত-আট বছরের বকেয়া ভাড়া আদায় করে ব্যবসায়ীদের বৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করার অনুমতি দেয়।’

দক্ষিণ সিটির মালিকানাধীন ফুলবাড়িয়া সুপারমার্কেট-২-এ নকশাবহির্ভূত দোকান উচ্ছেদে গত ৮ ডিসেম্বর থেকে অভিযান চালানো হচ্ছে। এই মার্কেটে ৯১১টি নকশাবহির্ভূত দোকান রয়েছে। ফুলবাড়িয়া এলাকায় সুন্দরবন স্কয়ার সুপার মার্কেট নকশাবহির্ভূত দোকান উচ্ছেদে গত ১৭ ডিসেম্বর অভিযান শুরু করা হয়।

এই মার্কেটে ৯৫৭টি নকশাবহির্ভূত দোকান রয়েছে। অভিযান শুরুর পর ব্যবসায়ীরা দাবি করে আসছিলেন, তাঁরা করপোরেশনকে ভাড়া দিয়ে বৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। এ বিষয়ে ডিএসসিসির বক্তব্য, অস্থায়ী দোকান বরাদ্দের ক্ষেত্রে শর্ত ছিল করপোরেশন চাইলে যেকোনো সময় এসব দোকান ভাঙতে পারবে। সেই হিসাবে তারা অভিযান চালিয়েছে।

অভিযান শুরুর পর অবৈধ দোকান বৈধ করে দেওয়ার নাম করে সাঈদ খোকন টাকা নিয়েছেন,এমন অভিযোগ ওঠে। গতকালের এই মানববন্ধনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা দাবি করেছেন, সাঈদ খোকন তাঁদের বৈধভাবে ব্যবসা করার সুযোগ দিয়েছেন।

ফুলবাড়িয়া সুপারমার্কেট-২-এর দোকান মালিক সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন ও নগর প্লাজা সুপার মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ আহমেদ দোকান বিক্রির নামে টাকা লোপাট করেছেন। এই দুই ব্যবসায়ীনেতার শাস্তিও দাবি করেন তাঁরা।

উচ্ছেদের নিন্দা জানিয়ে সাবেক এই মেয়র বলেন, “আমরা আশ্চর্যের সাথে লক্ষ্য করলাম, বিনা নোটিসে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন অবৈধ উচ্ছেদের মাধ্যমে বুলডোজার দিয়ে এ সমস্ত হাজার হাজার বৈধ দোকান গুঁড়িয়ে দিল এবং ফলশ্রুতিতে হাজার হাজার দোকান মালিক ও কর্মচারী সপরিবারে পথে বসে গেল।” ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য খোকন।

খোকন এক মেয়াদে মেয়রের দায়িত্ব পালনের পর গত বছর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তাকে বাদ দিয়ে সংসদ সদস্য ব্যরিস্টার তাপসকে প্রার্থী করে আওয়ামী লীগ।

সাঈদ খোকনের অভিযোগের বিষয়ে দক্ষিণ সিটির মেয়র ফজলে নূর তাপসের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। পরে প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে খুদে বার্তা পাঠালে জবাব দেননি।

তবে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মুখপাত্র ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের বলেন, এ বিষয়ে তাঁদের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।

যোগাযোগ করা হলে তাপসের ব্যক্তিগত সহকারী নাছিরুল হাসান সজীব গণমাধ্যমকে বলেন, “ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের চলমান দুর্নীতি ও অবৈধ স্থাপনার বিরুদ্ধে অভিযানে অনেকেই সংক্ষুব্ধ হতে পারে। তবে এই অভিযান কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়। সংক্ষুব্ধ হয়ে যে কেউ যে কোন কিছু বলতে পারে। একারণে এ সকল অভিযান থেমে থাকবে না।”

সর্বশেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারী ২০২১, ০২:৩৪
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও