আমানতকারীদের মাথায় হাত

বড় অঙ্কের টাকা আত্মসাৎকারী প্রতিষ্ঠান- আজিজ কো-অপারেটিভ, মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ, আইটিসিএল, যুবক ও ডেসটিনি
বড় অঙ্কের টাকা আত্মসাৎকারী প্রতিষ্ঠান- আজিজ কো-অপারেটিভ, মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ, আইটিসিএল, যুবক ও ডেসটিনি
মুক্তিবাণী অনলাইন ডেস্ক :

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সমবায় সমিতি ও কো-অপারেটিভ সোসাইটির নামে একরকম নির্বিঘ্নে চলছে বেআইনি ব্যাংকিং। এর মাধ্যমে আমানতকারীদের শত শত কোটি টাকা লোপাট করা হচ্ছে। প্রচলিত ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে অতি উচ্চ মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আমানত নেওয়া হচ্ছে।

প্রথমদিকে অল্পসংখ্যক আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়া হলেও এক পর্যায়ে টাকা ফেরত না দিয়ে তা আত্মসাৎ করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকসহ শাখাপ্রধানদের অনেকে গা ঢাকা দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ কারাগারে আটকও আছেন। এমন পরিস্থিতিতে ‘মাথায় হাত’ পড়েছে আমানতকারীদের। তাদের টাকা চলে যাচ্ছে সিন্ডিকেটের পকেটে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা। ব্যাহত হচ্ছে জাতীয় সঞ্চয় বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, আগে বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তখন সেটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এখতিয়ারেই ছিল। এখনো বেআইনি ব্যাংকিং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এখতিয়ারে রয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাজের পরিধি যেমন বেড়েছে, তেমনি আইন-কানুনও পরিবর্তন হয়েছে। এ বিষয়গুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরে এলে তদন্ত করা হয়। আর তদন্ত প্রতিবেদন বিএফআইইউ বা সিআইডিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তারাই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়।

সূত্র জানায়, লাইসেন্স ছাড়াই ৯টি প্রতিষ্ঠান বেআইনিভাবে ব্যাংকিং ব্যবসা করেছে বলে প্রমাণিত হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তিনটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। এগুলোর সমবায় অধিদপ্তরের কোনো নিবন্ধন ছিল না। শুধু ট্রেড লাইসেন্স ও জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজের নিবন্ধন ছিল।

বাকি ৬টি প্রতিষ্ঠান সমবায় অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন নিয়েছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সমবায় অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে রয়েছে- দি ঢাকা মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেড, আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স অ্যান্ড ফাইন্যান্স লিমিটেড বা আজিজ ব্যাংক, দি ঢাকা আরবান কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেড, দি স্মল ট্রেডার্স কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেড, মার্চেন্ট কো-অপারেটিভ ব্যাংক লিমিটেড এবং ক্রিসেন্ট মাল্টি পারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড (ক্রিসেন্ট কো-অপারেটিভ ব্যাংক)।

বেআইনি ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার দায়ে ইসলামিক ট্রেড অ্যান্ড কমার্স লিমিটেড (আইটিসিএল), যুব কর্মসংস্থান সোসাইটির (যুবক) সব ধরনের ব্যাংকিং কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ডেসটিনির আমানত সংগ্রহ কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে তারা। এ তিন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করার ফলে কর্তাব্যক্তিরা এখন জেলে রয়েছেন। আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা দেওয়া সম্ভব হয়নি।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বেআইনি ব্যাংক ব্যবসার মাধ্যমে আজিজ কো-অপারেটিভ আমানতকারীদের ৩৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। এর মধ্যে তারা ১০০ কোটি টাকা কানাডায় পাচার করা হয়। এছাড়া মার্কেন্টাইল কো-অপারেটিভ প্রায় ৯ কোটি, আইটিসিএল ৬০০ কোটি টাকা, যুবক ২ হাজার ৫০০ কোটি ও ডেসটিনি ৫ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। এর বাইরে ছোট ছোট আরও অনেক কো-অপারেটিভ সোসাইটি আমানতকারীদের টাকা লোপাট করেছে।

গত অক্টোবরে আজিজ কো-অপারেটিভের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সমবায় অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের ঢাকা অফিসের যুগ্ম নিবন্ধক রিক্তা দত্তকে প্রধান করে ৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি অন্তর্বর্তী ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি নিয়মিত কাজগুলো করছে। এর আগে তাজুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিটি বাতিল করা হয়েছে। তিনি এখন জেলে আছেন। একই সঙ্গে আগের কমিটির সঙ্গে কোনো লেনদেন না করার জন্য গ্রাহকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

সমবায় অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০১৮ সালের শেষদিকে ইন্দো বাংলা সমবায় সমিতি লিমিটেড সমবায় অধিদপ্তরের ঠিকানা ও ওয়েবসাইট ব্যবহার করে চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল। যার সঙ্গে অধিদপ্তরের কোনো সম্পর্ক ছিল না।

জনগণকে প্রতারিত করতে এ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে বলে তখন অধিদপ্তর থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল। বেকারদের কাছ থেকে অর্থ আত্মসাৎ করার জন্যই এ ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল। বেশ কয়েক বছর আগে লাইসেন্স ছাড়াই জাপান-বাংলাদেশ ব্যাংকের নামেও এমন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছিল। তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপে প্রতিষ্ঠানটির কার্যকর বন্ধ হয়ে যায়।

এছাড়া আইটিসিএল ও যুবক শুধু ট্রেড লাইসেন্সের ভিত্তিতে, ডেসটিনি শুধু জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজের নিবন্ধন নিয়ে বেআইনি ব্যাংকিং ব্যবসা করেছে। তারা মাত্রাতিরিক্ত মুনাফার লোভ দেখিয়ে আমানতকারীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেছে। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকিং ব্যবসা করতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লাইসেন্স নিতে হয়। অন্যথায় কেউ ব্যাংকিং ব্যবসা করতে পারে না।

সমবায় অধিদপ্তরের অতিরিক্ত নিবন্ধক আহসান কবীর বলেন, প্রতিবছর তারা সমিতিগুলোর কার্যক্রম নিবিড়ভাবে অডিট করছেন। এতে কোনো অনিয়ম ধরা পড়লে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কিছু সমিতির অনিয়ম শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হলে তারা এর বিরুদ্ধে আদালতে রিট করে কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করছে। এসব রিট দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারি আইনজীবীদের পাশাপাশি বেসরকারিভাবে ৫টি আইনজীবী প্যানেল নিয়োগ করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) ও সমবায় অধিদপ্তর তদন্ত করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সমবায় সমিতি ও কো-অপারেটিভ সোসাইটির নামে বেআইনি ব্যাংক ব্যবসার প্রমাণ পেয়েছে।

একই সঙ্গে আমানতকারীদের প্রতারিত করতে অনেক প্রতিষ্ঠান বেআইনিভাবে নিজেদের নামের শেষে ‘ব্যাংক’ শব্দটি ব্যবহার করছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএফআইইউ থেকে তীব্র আপত্তি করা হলেও উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে তারা ‘ব্যাংক’ শব্দটি ব্যবহার করেই যাচ্ছে। ফলে সহজ সরল সাধারণ মানুষ এদের স্বীকৃত ব্যাংক মনে করেই আমানত রেখে প্রতারিত হচ্ছেন।

সমবায় সমিতি বা কো-অপারেটিভ সোসাইটিতে আমানতকারীরা যাতে টাকা জমা না রাখেন সে বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ লক্ষ্যে গণমাধ্যমে প্রচার চালানো হবে, যারা বেআইনি ব্যাংক ব্যবসা করছে তাদের বিরুদ্ধ ব্যবস্থা নেওয়া হবে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে, যেসব প্রতিষ্ঠান সমবায় সমিতির থেকে নিবন্ধন নিয়ে বেআইনি ব্যাংক ব্যবসা করছে সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রচলিত আইন অনুযায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লাইসেন্স ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের নামের শেষে বা শুরুতে কিংবা মাঝে ‘ব্যাংক’ শব্দটি ব্যবহার করতে পারবে না। কিন্তু অনেক কো-অপারেটিভ প্রতিষ্ঠান তাদের নামের শেষে ব্যাংক শব্দটি ব্যবহার করছে। ওইসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত নিবন্ধক আহসান কবীর বলেন, বেআইনিভাবে যেসব সমিতি নামের শেষে বা কোনো অংশে ‘ব্যাংক’ শব্দটি ব্যবহার করছে তাদের তা বাদ দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা চিঠির বিরুদ্ধে আদালতে রিট করে এ কার্যক্রমও থামিয়ে রেখেছে।

জানা গেছে, কুমিল্লায় বেশকিছু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের টাকা দিতে পারছে না। এর মধ্যে সম্প্রতি দুটি প্রতিষ্ঠানকে কুমিল্লাহ সমবায় অফিসে তলব করে গ্রাহকদের সঙ্গে সমঝোতা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুটি সমিতির নতুন কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। কমিটি সমিতির সম্পদ বিক্রি করে আমানতকারীদের টাকা পরিশোধের উদ্যোগ নিয়েছে।

এ প্রসঙ্গে কুমিল্লা জেলা সমবায় কর্মকর্তা আল আমীন যুগান্তরকে বলেন, জেলার বেশ কয়েকটি সমবায় সমিতি গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে মামলা হয়েছে। সেগুলো এখন বিচারাধীন। মামলা থাকায় কিছু করা যাচ্ছে না। মামলার বাইরে ইতোমধ্যে চারটি প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের টাকা ফেরত দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সেবার নামে একটি কো-অপারেটিভ সোসাইটির টাকা ফেরতের কার্যক্রম বেশ এগিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধিত আর কোনো সমিতি যাতে গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ করতে না পারে সেজন্য নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

বেআইনি ব্যাংকিং কার্যক্রম নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের করা বিশেষ তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানগুলো প্রচলিত ব্যাংকের চেয়ে বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছে থেকে আমানত সংগ্রহ করে। মাঠ পর্যায়ে তারা এজেন্ট নিয়োগ করে নিজেদের নামের শেষে ব্যাংক লিখে তা প্রচার করে।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শরিয়াহভিত্তিক কার্যক্রমের পরিচয় দিয়ে আমানত নিচ্ছে। আমানত নেওয়া হয় দীর্ঘমেয়াদে। প্রথমদিকে কিছু আমানতের মুনাফাসহ পরিশোধ করে গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করে। পরে একসঙ্গে যখন বেশি অর্থ পরিশোধের সময় আসে, তখন আর পারে না। এর মধ্যে জমা অর্থের একটি বড় অংশ তারা সরিয়ে ফেলে। বেআইনি ব্যাংকিংয়ের দায়ে যে নয়টি প্রতিষ্ঠানে তদন্ত করা হয়েছে তার সবগুলোতেই এ ধরনের কৌশলে জালিয়াতি করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে নিবন্ধিত সমবায় সমিতির কার্যক্রম জেলা বা থানা সমবায় অফিস থেকে কঠোরভাবে তদারকি এবং অনিবন্ধিত সমিতির কার্যক্রম মাঠ প্রশাসনের মাধ্যমে নজরদারি বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বেআইনি ব্যাংকিংয়ে মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা দেওয়ার নামে প্রতারণা করায় প্রচলিত বৈধ ব্যাংকিং ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাড়তি মুনাফার লোভে আমানত চলে যাচ্ছে বেআইনি ব্যাংকিংয়ে। একপর্যায়ে প্রতারণার শিকার হয়ে ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রতি আস্থা নষ্ট হচ্ছে।

সূত্র জানায়, আগে কো-অপারেটিভ সোসাইটিগুলো সদস্যদের বাইরে থেকেও আমানত নিতে পারত। ২০১৩ সালে সমবায় আইন সংশোধন করে সদস্যদের বাইরে থেকে আমানত নেওয়া নিষিদ্ধ করে। তারপরও বিভিন্ন সমিতি সদস্যদের বাইরে থেকে আমানত নিচ্ছে।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত নিবন্ধক আহসান কবীর বলেন, কোনো সমিতি যদি সদস্যদের বাইরে থেকে আমানত নেয় এবং আমরা জানতে পারি তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সদস্য না হয়ে কোনো কো-অপারেটিভ সোসাইটিতে আমানত রাখার আগে গ্রাহকদেরও ভেবেচিন্তে দেখা উচিত।

সর্বশেষ আপডেট: ৫ জানুয়ারী ২০২১, ০৩:১৪
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও