দেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেয়ার পর মৃদু থেকে তীব্র পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ার শঙ্কা আছে। ট্রায়াল পর্যায়ের বিভিন্ন দেশের মানুষের মধ্যে নানা ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। যার মধ্যে মাথাব্যথা, বমিভাব, পেটেব্যথা, র্যাশ এমনকি তীব্র শ্বাসকষ্টের মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে দেখা গেছে। ‘ইনফরমেশন ফর ইউকে হেলথকেয়ার প্রফেশনালস’-এর প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। তবে বেশিরভাগ প্রতিক্রিয়ার তীব্রতা ছিল হালকা থেকে মাঝারি ধরনের।
বাংলাদেশেও অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেয়া হবে। এরপর মানুষের মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। তবে এটা রোধে করণীয় চূড়ান্ত করে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়ার জন্য হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের প্রস্তুত রাখা হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল এবং দক্ষিণ আফ্রিকাতে পরিচালিত হয়। ওই ট্রায়ালগুলোতে অংশগ্রহণকারী ছিলেন ২৩ হাজার ৭৪৫ জন। যার মধ্যে ১২ হাজার ২১ জন কমপক্ষে একটি ডোজ পেয়েছিল। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ডেমোগ্রাফিক বৈশিষ্ট্যগুলো সাধারণত একই রকম ছিল। সামগ্রিকভাবে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৯০ দশমিক ৩ শতাংশের বয়স ছিল ১৮ থেকে ৬৪ বছরের মধ্যে। বাকি ৯ দশমিক ৭ শতাংশের বয়স ছিল ৬৫ বছরের বেশি। ট্রায়ালে টিকাপ্রাপ্তদের মধ্যে ৭৫ দশমিক ৫ শতাংশই সাদা মানুষ, ১০ দশমিক ১ শতাংশ ছিল কালো এবং ৩ দশমিক ৫ শতাংশ ছিল এশীয়। টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে ৫৫ দশমিক ৮ শতাংশ নারী এবং ৪৪ দশমিক ২ শতাংশ পুরুষ।
এ জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রায় ৬০ ভাগ অংশগ্রহণকারীর ভেতর সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া লক্ষ করা গেছে। তা হলো যেই স্থানে ইনজেকশন দেয়া হয়েছে সেখানে ব্যথা, ফুলে ওঠা এবং ক্লান্তিবোধ ইত্যাদি। এছাড়া টিকা গ্রহণের পর ব্যথা, মাথাব্যথা, অবসন্নতা দেখা গেছে ৫০ ভাগ মানুষের মধ্যে। শরীরের মাংশপেশিতে ব্যথা, সারা শরীরে ব্যথা অনুভব করেছেন ৪০ ভাগ। এছাড়া ৩০ শতাংশ মানুষের মধ্যে শীতলতা এবং ২০ ভাগ মানুষের মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবে বমি বমি ভাব লক্ষ করা গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেশিরভাগ বিরূপ প্রতিক্রিয়াগুলো ছিল সাধারণত হালকা থেকে মাঝারি ধরনের। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো দেখা গেছে টিকার প্রথম ডোজ দেয়ার পর। এই টিকা দেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে সমস্যাগুলো কেটেও গেছে।
প্রতিবেদনে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াকে তিন ভাগে ভাগ করে দেখানো হয়েছে। এগুলো হলো অতিসাধারণ, সাধারণ এবং বিরল। এখানে বিরল পাশ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে রক্ত এবং লিম্প্যাথিক সিসটেম ডিসঅর্ডার, মেটাবলিজম অ্যান্ড নিউট্রিশন ডিসঅর্ডার, গ্যাস্ট্রএন্টারোলজিক্যাল ডিসঅর্ডার, স্কিন অ্যান্ড সাবকুটানিকাস টিস্যু ডিসঅর্ডার। যার মধ্যে প্রধান সমস্যা ছিল, পেটেব্যথা, ক্ষুধামন্দা, র্যাশ এবং তীব্র চুলকানি।
অতি সাধারণ সমস্যা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো ছিল-মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, মাংসপেশির ব্যথা, অস্থি সংযোগস্থলে ব্যথা। এছাড়া টিকা দেয়ার স্থলে কোমলতা বা নমনীয়তা, ব্যথা, উষ্ণতা, ফুলে ওঠা, টিকাদান স্থলে ক্ষতের সৃষ্টি হওয়া, ক্লান্তি, অসুস্থতা বোধ করা, জ্বর জ্বর ভাব এবং শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া। এছাড়া যে সমস্যা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলোকে সাধারণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে সেগুলো হলো- টিকাদান স্থল শক্ত হয়ে যাওয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো অসুস্থ বোধ করা বা একই ধরনের রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া এবং বমি হওয়া।
একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যুগান্তরকে বলেন, এখানে সাধারণ এবং অতি সাধারণ পর্যায়ে যেসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলো প্রায় সব ধরনের টিকা প্রয়োগের ক্ষেত্রেই ঘটে থাকে। তাছাড়া বিরল হিসাবে যেসব প্রতিক্রিয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেগুলোও ইতঃপূর্বে দু-একটি টিকার ক্ষেত্রে দেখা গেছে। তিনি বলেন, এ টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল যদি আমাদের দেশে হতো তাহলে ভালোভাবে বোঝা যেত এই অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর মধ্যে কি ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়ে থাকে। এখন টিকাদান কার্যক্রম শুরু করা না হলে আমাদের দেশে এ টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কতটা তীব্র হবে নাকি এর বাইরেও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে সেটি বলা সম্ভব নয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অধিদফতরের মা, শিশু ও কিশোর স্বাস্থ্য কর্মসূচির পরিচালক ডা. শামসুল হক যুগান্তরকে বলেন, টিকাদানের ক্ষেত্রে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। তবে যেহেতু এ ভ্যাকসিনটি নতুন এবং আমাদের দেশে এটি এখনো প্রয়োগ করা হয়নি তাই কি ধরনের প্রতিক্রিয়া হবে সেটি বলা যায় না। তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে এসব বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। যারা টিকা দেবেন তাদের এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। যাতে করে টিকা গ্রহণকারীদের কোনো সমস্যা হলে বা প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন পেতে বাংলাদেশ সরকার ভারতে সেরাম ইনস্টিটিউট-এর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। এ ভ্যাকসিন গত বছরের শেষ সপ্তাহে ইউকে সরকার অনুমোদন দেয়। এমনকি ভারতও ইতোমধ্যে ভ্যাকসিনটি অনুমোদন করেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর ভ্যাকসিন বিষয়ক জাতীয় পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। পাঠানো হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাতেও। এমনকি ভ্যাকসিন প্রদানসংক্রান্ত সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
সর্বশেষ আপডেট: ৪ জানুয়ারী ২০২১, ০৩:৩০
পাঠকের মন্তব্য