ক্ষমতার চেয়ার আর কারাগার খুব পাশাপাশি থাকে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার সকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জাতীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নতুন বিমান ধ্রুবতারা’সহ বেশ কয়েকটি প্রকল্প উদ্বোধন শেষে তিনি এ মন্তব্য করেন।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিভিআইপি টার্মিনালে আয়োজিতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রী মাহাবুব আলীসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। গণভবনপ্রান্তে অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস। প্রধানমন্ত্রী দেশের বিভিন্ন স্থানে নবনির্মিত ২০টি ফায়ার স্টেশন, জেলা সদরে নবনির্মিত ৬টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, কেরানীগঞ্জে মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার এবং একটি এলপিজি স্টেশন’র উদ্বোধন ঘোষণা করেন। গণভবন প্রান্তসহ ভিআইপি লাউন্জ, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর, কাজী আলাউদ্দীন রোড যুক্ত ছিল। এ প্রান্তে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যারা রাজনীতি করি আমাদের ক্ষমতার চেয়ার আর কারাগার খুব পাশাপাশি থাকে। তবে ২০০৭ সালে যেটা হয়েছে, ক্ষমতা ছাড়াও সবার আগে কিন্তু আমাকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কাজেই সেটা আমরা জানি, রাজনীতি করতে গেলে এটা করতেই হবে। সেজন্য আমরা কারাগারগুলো উন্নত করে যাচ্ছি। নতুন কারাগার নির্মাণ করা হয়েছে কেরানীগঞ্জে। সেটা আমরা উদ্বোধন করেছি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কারাগারে শুধু অপরাধীদের বন্দি করে রাখা নয়, সঙ্গে সঙ্গে তাদের মনমানসিকতার পরিবর্তন করা। যাতে তারা ভবিষ্যতে বের হয়ে আবার একই অপরাধে জড়িয়ে না পড়ে।
কারাগারে কারারক্ষী এবং কারাবন্দিদের জন্য জীবনমান তথা সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যারা গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যায় তাদের পরিবারগুলো কষ্ট পায়। তারা একজন অপরাধ করে তার কারণে পরিবারের অন্য সদস্যরা কষ্ট পায়। কারাগারে এতগুলো লোক বেকার হয়ে বসে থাকবে কেন? সেই জন্য কারাগারে তাদের ট্রেনিং করানো, তাদের কিছু পণ্য উৎপাদন করা এবং উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য হলো, কারাগারে শুধু অপরাধীদের বন্দি করে রাখা নয়, সঙ্গে সঙ্গে তাদের মানসিকতাগুলো চেঞ্জ করা, পরিবর্তন করা, তাদের কিছু ট্রেনিং দেওয়া, তাদের কিছু শিক্ষা দেওয়া এভং যেন ভবিষ্যতে বের হয়ে একই অপরাধে জড়িয়ে না পড়ে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা কারাগারে একটা ব্যবস্থা নিয়েছি। এ লক্ষ্যে প্রত্যেক জেলার কারাগুলিকেও উন্নত করে দেওয়া হচ্ছে বলে অবহিত করেন প্রধানমন্ত্রী।
করোনাকালে জেলা কারাগারগুলিকে ভার্চুয়াল কোর্ট যেন পরিচালনা করা যায়, কোর্টে মামলা পরিচালনা করা হয় সেইদিকেও গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা হচ্ছে বলে অবহিত করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যেকটা আইন, সবকিছুই ডিজিটালাইজড করে ফেলা হচ্ছে। যে কোনো মামলার কজলিস্ট যেটা থাকবে সেটাও অনলাইনে জানা যাবে। তা ছাড়া প্রত্যেকটা আইন জানা যাবে। অর্থাৎ প্রযুক্তিখাত ব্যবহারের মাধ্যমে সমস্ত কার্যক্রমগুলো যেন আরও সুন্দরভাবে-সুষ্ঠুভাবে হয় সেই ব্যবস্থাটি আমরা নিচ্ছি।’
তিনি বলেন, মামলার রায় যেটা বের হয় সেটা ইংরেজীতে বের হয় সেটাও বাংলা করে ছাপানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অনেক সময় আমাদের দেশের মানুষ হয়ত জানতেই পারে না বুঝতেই পারে না কী সাজা পেল, তাদেরকে আইনজীবী যেটা বোঝাই সেটাই বুঝতে হয়।
প্রত্যেক উপজেলায় ফায়ার স্টেশন থাকবে। এর বাইরে কিছু কিছু বড় ইউনিয়ন আছে, অথবা কিছু দুর্গম এলাকা রয়েছে সেসব এলাকার জন্য বোধহয় বিশেষভাবে উদ্যোগ নিয়ে আমাদের আরও ফায়ার সার্ভিস স্টেশন করতে হবে জানান প্রধানমন্ত্রী।
এভাবেই মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দেওয়া, সেটাই আমাদের লক্ষ্য বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সার্বিকভাবে মানুষের সার্বিক উন্নয়নের জন্যই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। করোনা ভাইরাসের কারণে জন্য মানুষের পাশে দাঁড়াতে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী ব্যাপক কাজ করে যাচ্ছে। ৯৯৯ ফোন করলে যে কোন সমস্যার দ্রুত সহযোগিতা পুলিশ বাহিনী জনগণকে দিয়ে থাকে। আমাদের দেশটাকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। তাছাড়া আমাদের দেশের মানুষের কল্যাণেই জন্য কাজ করা, এটিই আমাদের লক্ষ্য বলে জানান শেখ হাসিনা
ধ্রুবতারা: কানাডার প্রখ্যাত নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ডি হ্যাভিল্যান্ড নির্মিত ৭৪ আসন বিশিষ্ট ড্যাশ ৮-৪০০ উড়োজাহাজটি পরিবেশবান্ধব ও অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধাসমৃদ্ধ। এ উড়োজাহাজের এইইপিএ (হাই-ইফিশিয়েন্সি পার্টিকুলেট এয়ার) ফিল্টার প্রযুক্তি মাত্র ৪ মিনিটেই ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাসসহ অন্যান্য জীবাণু ধ্বংসের মাধ্যমে উড়োজাহাজের অভ্যন্তরের বাতাসকে করে সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ, যা যাত্রীদের করবে অধিকতর সতেজ ও নিরাপদ। এছাড়াও এ উড়োজাহাজে রয়েছে পর্যাপ্ত লেগস্পেস, এলইডি লাইটিং ও প্রশস্ত জানালা, যে কারণে ভ্রমণ হয়ে উঠবে অধিক আরামদায়ক।
বাংলাদেশ ও কানাডা সরকারের মধ্যে জি-টু-জি ভিত্তিতে কেনা ৩টি উড়োজাহাজের মধ্যে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ড্যাশ ৮-৪০০ উড়োজাহাজ দুটি যথাক্রমে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে বিমান বহরে যুক্ত হবে। নতুন উড়োজাহাজ বহরে সংযোজনের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ ও স্বল্প দূরত্বের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক গন্তব্যসমূহে বিমানের সাপ্তাহিক ফ্রিকোয়েন্সি বৃদ্ধি করা হবে।
সর্বশেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০২০, ০১:০৮
পাঠকের মন্তব্য