নতুন ধরনের করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে ব্রিটেন থেকে ফ্লাইট নিষিদ্ধ করেছে ৪০টিরও বেশি দেশ। খবর দি টেলিগ্রাফের।
ব্রিটেনের নতুন ধরনের করোনা ভাইরাস নিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্বে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে অভিন্ন নীতি গ্রহণে বৈঠক করেছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)। এরই মধ্যে বৃটেনের করোনা ভাইরাস নিয়ে আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
ইইউয়ের বেশির ভাগ দেশ ব্রিটেন থেকে আসা ফ্লাইটের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। অবশ্য নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বিভিন্ন দেশের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন। ব্রিটিশ নাগরিকদের জীবনযাত্রায় সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে ফ্রান্সের নিষেধাজ্ঞায়। ব্রিটেনের দক্ষিণাংশে গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ডোভারে লরিগুলোর দীর্ঘ লাইন চোখে পড়েছে। ফলে খাদ্য সংকটের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ব্রিটেন থেকে আসা ফ্লাইট ও ভ্রমণ বাতিল করেছে যেসব দেশ সেগুলো হচ্ছে, আর্জেন্টিনা, বুলগেরিয়া, বেলজিয়াম, কানাডা, চিলি, কলোম্বিয়া, চেক রিপাবলিক, ডেনমার্ক, এল সালভেদর, এস্তোনিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, হংকং, ভারত, ইরান, ইসরায়েল, ইতালি, জর্ডান, কুয়েত, লাটভিয়া, লিথুনিয়া, লুক্সেমবার্গ, মরক্কো, নেদারল্যান্ডস, ওমান, পাকিস্তান, পেরু, রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ড, রাশিয়া, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, তিউনিশিয়া, তুরস্ক, ইকুয়েডর, গ্রিস, পর্তুগাল, সৌদি আরব ও স্পেন।
এদিকে, ইউরোপ ছাড়াও যুক্তরাজ্য থেকে যাত্রীদের আগমনে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারত, ইরান, ও কানাডা। অন্যদিকে, সৌদি আরব, কুয়েত ও ওমান আন্তর্জাতিক যাত্রীদের সেসব দেশে ঢুকতে দিচ্ছে না।
যুক্তরাষ্ট্র এখনো কোনো ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি। তবে দুটি বিমান সংস্থা ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ ও ডেল্টা শুধু করোনা নেগেটিভ যাত্রীদেরই নিউইয়র্কের জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরের উদ্দেশে যেতে ইচ্ছুকদের অনুমতি দিচ্ছে।
অন্যদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকেও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কয়েকটি দেশ। সেখানে নতুন ধরনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তবে সেটি যুক্তরাজ্যে শনাক্ত হওয়া ধরনটির চেয়ে ভিন্ন।
বাংলাদেশ সময় আজ মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে ২০ লাখ ৭৩ হাজার ৫১১ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে নতুন করে ৩৩ হাজারের বেশি মানুষের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত এই রোগে মৃত্যু হয়েছে ৬৭ হাজার ৬১৬ জনের। বিশ্বখ্যাত পরিসংখ্যান সাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার এসব তথ্য জানিয়েছে।
নতুন ধরনের করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়ার কারণে ডেনমার্ক থেকে বিদেশিদের সফরে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সুইডেন।
মূল করোনা ভাইরাসের মতো ভয়াবহ না হলেও রূপান্তরিত করোনা ভাইরাস অধিক সংক্রামক। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি বিভাগের প্রধান মাইক রায়ান বলেছেন, নতুন করোনা ভাইরাসের বিবর্তন একটি মহামারিতে স্বাভাবিক ঘটনা। তবে এটা নিয়ন্ত্রণের বাইরে নয়।
তার শেষের এই মন্তব্যটি বৃটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানককের মন্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কারণ, ম্যাট হ্যানকক রোববার এই সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ভ্রমণকারীরা কিছু দেশে নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছেন। এর কারণ, সেখানেও নতুন এক রকম করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। তবে সেটার সঙ্গে বৃটেনের রূপান্তরিত করোনা ভাইরাসের কোন সম্পর্ক নেই।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, তিনি বাণিজ্য সচল রাখার জন্য ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রনের সঙ্গে কাজ করছেন। তিনি আশা করেছেন, এ সমস্যা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমাধা হয়ে যাবে। ফরাসি পরিবহনমন্ত্রী ক্লেমেন্ট বিউনি বলেছেন, আজ মঙ্গলবারের মধ্যে তার দেশ ঘোষণা করবে, তারা যে ৪৮ ঘন্টার ভ্রমণ ও লরির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন, তারপরে কি ব্যবস্থা নেয়া হবে। ব্রিটেনে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ২৭ জাতির সংগঠন ইইউ সমন্বিতভাবে কি সমাধান নিতে পারে তা নিয়ে আলোচনা চলছিল। তবে সেই আলোচনার কোনো ফল পাওয়া যায়নি। আজ মঙ্গলবার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। তবে একটি বিষয় গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হয়েছে। তাতে বৃটেন থেকে কোনো ব্যক্তি ইইউয়ের কোনো দেশে গেলে তার করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট থাকতে হবে বলে দাবি করা হয়েছে। সোমবার ফাইজার-বায়োএনটেক আবিষ্কৃত করোনা ভাইরাসের টিকা অনুমোদন দিয়েছে ইইউ-এর মেডিসিন বিষয়ক নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
সর্বশেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২০, ১৩:১২
পাঠকের মন্তব্য