পুলিশের কাঁধে রাইফেলের বদলে এখন কোমরে পিস্তল

পুলিশের কোমরে ট্যাকটিক্যাল বেল্টে ছোট অস্ত্র এবং ওয়াকিটকি
পুলিশের কোমরে ট্যাকটিক্যাল বেল্টে ছোট অস্ত্র এবং ওয়াকিটকি
মুক্তিবাণী অনলাইন ডেস্ক :

পুলিশের কাঁধে আর রাইফেল নেই। এতদিন পুলিশ সদস্যরা চায়নিজ রাইফেল কখনো কাঁধে ঝুলিয়ে আবার কখনো হাতে রেখে দায়িত্ব পালন করছেন। এতে তাদেরকে হিমশিম খেতে হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে পুলিশের মাঠপর্যায়ের সদস্যদের এভাবে দায়িত্ব পালন করতে দেখে সবাই অভ্যস্ত। সেই দিন এখন শেষ। উন্নত বিশ্বের আদলে বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যদেরও দেয়া হয়েছে ছোট পিস্তল। গত মঙ্গলবার থেকে ক্ষুদ্র অস্ত্র ব্যবহার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করছে পুলিশ। 

তবে সারাদেশে না হলেও প্রাথমিকভাবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশে (সিএমপি) এই অস্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে। ডিএমপি ও সিএমপিতে কর্মরত কনস্টেবল থেকে উপপরিদর্শক (এসআই) পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যদের ট্যাকটিক্যাল বেল্ট দেয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার সকালে ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইনস অডিটরিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে ট্যাকটিক্যাল বেল্টের উদ্বোধন করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। আনুষ্ঠানিকভাবে ডিএমপি ও সিএমপি সর্বাধুনিক অপারেশনাল গিয়ার দেয়া হয়েছে। ফলে এখন থেকে নিয়মিত দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশের হাতে আর বড় অস্ত্র দেখা যাবে না। পুলিশ ছোট অস্ত্র বহন করবে। আধুনিক এই গিয়ারের মধ্যে থাকছে ট্যাকটিকাল বেল্ট, স্মল আর্মস উইথ থাই হোলস্টার এবং হ্যান্ডস ফ্রি কমিউনিকেশনের ব্যবস্থা। বেল্টের সঙ্গে থাই হোলস্টার যুক্ত থাকবে, যার ভেতরে থাকবে ছোট অস্ত্র, এক্সপ্যান্ডেবল ব্যাটন, টর্চ, হ্যান্ডকাফ ও পানির বোতল। ফলে বড় অস্ত্র, ওয়াকিটকি ও লাঠি-কানোটাই পুলিশকে আর হাতে বহন করতে হবে না। এক্সপ্যান্ডেবল ব্যাটন প্রয়োজনে বড়-ছোট করা যাবে।

এ বিষয়ে রাজারবাগে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ জানান, ক্ষুদ্রাস্ত্র তাদের কাছে মজুদ ছিল। এই কাজে তাদের নতুন করে বিশেষ কিছু কেনাকাটা করতে হয়নি। বড় অস্ত্রগুলো প্রয়োজনে পুলিশ ব্যবহার করবে। সেগুলোও সংরক্ষণ করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, পুলিশের শরীরের সঙ্গে ভিডিও ক্যামেরা লাগানোর একটা উদ্যোগ তারা আগেই নিয়েছিলেন। কিন্তু কাজটি খুব ব্যয়বহুল। তারপরও তারা পর্যায়ক্রমে ভিডিও ক্যামেরা লাগানোর কাজ শেষ করবেন।

পুলিশ জানিয়েছে, দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের হাত থাকবে সম্পূর্ণ খালি। এতে বিপদগ্রস্ত মানুষের যে কোনো প্রয়োজনে দ্রুত সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে পারবেন তারা। আবার অপরাধীকে দ্রুত ঘায়েল করতে ট্যাকটিক্যাল বেল্টে থাকা প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ব্যবহার করতে পারবেন অনায়াসেই। ট্যাকটিক্যাল বেল্টের মূল স্লোগান হলো ‘হ্যান্ডস ফ্রি পুলিশিং’ মানে হাত খালি রাখা। এতে বড় অস্ত্র বহনের ঝক্কি আর থাকবে না। এতে পুলিশের কাজে গতি আসবে, মনোবলও বাড়বে। একইসঙ্গে পুলিশকে দেখতে আরও আধুনিক ও যুগোপযোগী লাগবে।

জানা গেছে, পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ দায়িত্ব নেয়ার পর এই বাহিনীকে  আরও উন্নত করার চেষ্টা করছেন। কনস্টেবল থেকে সাব-ইন্সপেক্টর পর্যন্ত উন্নতমানের অস্ত্র দিতে পরিকল্পনা নিয়েছেন তিনি। পরে আইজিপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিশেষ অনুমোদন নেন। চায়নিজ রাইফেলের পরিবর্তে ট্যাকটিক্যাল বেল্টের অস্ত্র দেয়ার ব্যাাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। উন্নত বিশ্বে পুলিশের অস্ত্র সাধারণত প্রয়োজন ছাড়া প্রদর্শন করা হয় না। আবার এমনভাবে পুলিশ সদস্যদের কাছে সংরক্ষণ করা হয়, যেন অপরাধীদের দমনে দ্রুত সেটি ব্যবহার করতে পারে।

পুলিশ সদর দফতর জানিয়েছে, প্রকাশ্যে রাইফেল দেখিয়ে আর চলাফেরা করবে না পুলিশ সদস্যরা। পুলিশের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখে কেউ যেন আর ভয় না পান সেই উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। অস্ত্র দেখে জনআতঙ্ক দূর করতে মাঠপর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের দেয়া হচ্ছে ‘অপারেশনাল গিয়ার ট্যাকটিক্যাল বেল্ট’। পর্যায়ক্রমে সারা দেশের পুলিশ সদস্যরাই পাবেন এই ট্যাকটিক্যাল বেল্ট।

‘ট্যাকটিক্যাল বেল্ট’ পরে মাঠে পুলিশ: গতকাল বুধবার শাহবাগ ও রমনা এলাকায় ঘুরে ট্যাকটিক্যাল বেল্ট পরা অবস্থায় পুলিশ সদস্যদের কর্তব্য পালন করতে দেখা যায়। মৎস্য ভবনের সামনে কর্তব্যরত এএসআই নাজমুল ওই বেল্ট পরে রয়েছে, সঙ্গে আরও তিন পুলিশ সদস্য। সবার পরণে ট্যাকটিক্যাল বেল্ট। তিনি বলেন, এখন হাতমুক্ত, এতে স্বস্তিবোধ করছি। লম্বা অস্ত্র বহনের ঝামেলা নেই। রমনা বিভাগের পুলিশের উপ-কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান বলেন, ট্যাকটিক্যাল বেল্ট অ্যান্ড অ্যাকসেসরিজের মধ্যে রয়েছে থাই হোলেস্টার উইথ আর্মস, এক্সপান্ডেবল ব্যাটন, হ্যান্ড কাফ, ওয়ারলেস, টর্চ লাইট, ওয়াটার বটল, মাইক্রোফোন। এখনো সেটের সঙ্গে মাইক্রোফোন সেট করা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, তার বিভাগের ১২২ জন পুলিশ সদস্য এই বেল্ট পরে দায়িত্ব পালন করছেন। দুটি আগ্নেয়াস্ত্র রাখার স্থান রয়েছে। একটিতে পিস্তল রাখা হবে এবং আরেকটিতে এসএমজি রাখা হবে। তবে বর্তমানে যারা দায়িত্ব পালন করছেন তারা একটি আগ্নেয়াস্ত্র বহন করছেন।

গুলশান বিভাগের পুলিশের উপ-কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী একটি গণমাধ্যমকে বলেন, তার বিভাগের ১৪৬ জন পুলিশ সদস্য এই বেল্ট পরে দায়িত্ব পালন করছেন। ঢাকা মহানগর থেকে জানানো হয়, এই বেল্ট পরে সার্জেন্টরাও ডিউটি করছেন। ঢাকা মহানগর পুলিশের ১৩৫ জন এসআই, ১৭১ জন এএসআই ও ৬৭ জন পুলিশ সদস্য এই বেল্ট পরে কাজ করছেন। সাজ্জাদুর রহমান বলেন, কনস্টেবলরাও এই বেল্ট পরে ডিউটি দিচ্ছেন।

এদিকে গতকাল সংবাদ সম্মলনে জানানো হয়, পুলিশ সদস্যদের কর্মদক্ষতা ও অপারেশনাল সক্ষমতা বাড়িয়ে দায়িত্ব পালনের সময় হাত খালি রাখা, রুটিন দায়িত্ব পালনের সময় ভারি ও বহনে কষ্টকর লম্বা অস্ত্রের পরিবর্তে হালকা ও সহজে বহনযোগ্য ছোট অস্ত্র ব্যবহার করা, অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতে বেশি হতাহতের ঘটনা এড়াতে লম্বা ব্যারেলের অস্ত্রের ব্যবহার ধারাবাহিকভাবে কমিয়ে আনাই এর উদ্দেশ্য। তাছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে দায়িত্ব পালন সহজ ও আরামদায়ক করা, ঔপনিবেশিক উত্তরাধিকার ধারা থেকে বেরিয়ে আসা, বিশ্বের অন্যান্য আধুনিক দেশের মত বাংলাদেশ পুলিশকে গড়ে তোলা এবং পুলিশ ও জনগণের মধ্যে মানসিক দূরত্ব কমিয়ে এনে পুলিশি সেবাকে আরও সহজ করতে এই নতুন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে বলে জানানো হয়। শাহবাগ থানার পরিদর্শক তদন্ত আরিফুর রহমান সরদার বলেন, আজ ছয়টি পার্টি ডিউটি দিচ্ছেন। শাহবাগ মোড়, মৎস্য ভবনের সামনে, প্রেসক্লাব, মেডিকেল ও বিশ্ববিদ্যালয় তারা কাজ করছেন ওই বেল্ট পরে। এছাড়া থানায় যারা ডিউটি দিচ্ছেন তারাতো লম্বা অস্ত্র নিয়ে কাজ করবে।

সর্বশেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২০, ১২:০৬
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও