ওসি প্রদীপের গোপন তথ্য জেনে যাওয়ায় মেজর সিনহাকে হত্যা করা হয়

গতকাল রোববার বিকেলে রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন র‌্যাবের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ
গতকাল রোববার বিকেলে রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন র‌্যাবের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ
মুক্তিবাণী অনলাইন ডেস্ক

* অভিযোগ প্রমাণিত হলে মৃত্যুদণ্ড হবে ওসি প্রদীপের

* এসপির বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার সুপারিশ

* মামলা বাতিল চেয়ে লিয়াকতের রিভিশন মামলা খারিজ

* শিপ্রা ও সিফাতের মাদক মামলার সত্যতা পাননি তদন্ত কর্মকর্তা

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিজের ইউটিউব চ্যানেলের ‘ডকুমেন্টারি’র জন্য শুটিংয়ে গেলেও টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশের অনেক গোপন তথ্য জেনে গিয়েছিলেন।

টেকনাফে প্রদীপ সিন্ডিকেটের ইয়াবা বাণিজ্য, ক্রসফায়ারে হত্যা, সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে নির্যাত করাসহ অবৈধ কর্মকান্ডের তথ্য ফাঁস হওয়ায় সিনহাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। এর আগে সিনহা ও তার সঙ্গীদের তিনদিনের মধ্যে টেকনাফ ছাড়ার হুমকিও দিয়েছিল প্রদীপ।  চাঞ্চল্যকর এ মামলা তদন্তে লোমহর্ষক এমন তথ্য পেয়েছে র‌্যাব। ১৩০ দিনের তদন্ত শেষে গতকাল রোববার কক্সবাজারের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে র‌্যাব। চার্জশিটে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। যার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। রাষ্ট্রপক্ষের প্রত্যাশা আসামীদের বিরুদ্ধে ৩০২ ধারার অভিযোগ প্রমাণে সক্ষম হবেন।

চার্জশিটে কক্সবাজার জেলার তখনকার পুলিশ সুপারের (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসাইনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এদিকে সিনহা হত্যা মামলা বাতিল চেয়ে প্রধান আসামী ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলীর করা রিভিশন মামলা খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। এছাড়া শিপ্রা ও সিফাতের মাদক মামলারও সত্যতা পায়নি তদন্ত কর্মকর্তা।

মেজর (অব.) সিনহা  হত্যা মামলার চার্জশিট দাখিল করার পর গতকাল বিকালে রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে র‌্যাব। সাংবাদিক সম্মেলনে র‌্যাবের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, ‘হত্যাকাণ্ড তদন্তের ভার র‌্যাব পাওয়ার চার মাস ১০ দিন পর তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাবের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার খাইরুল ইসলাম আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছেন। ৮৩ জন সাক্ষীকে অন্তর্ভুক্ত করে ২৬ পৃষ্ঠার এই চার্জশিটে ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জ গঠন করেছেন তিনি। এই ১৫ আসামীর  মধ্যে ৯ জন টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া পুলিশ সদস্য, তিনজন এপিবিএন’র বরখাস্ত হওয়া সদস্য এবং তিনজন বেসামরিক ব্যক্তি। ১৫ জনের মধ্যে ১৪ জন কারাগারে আছেন। একজন পলাতক। কারাগারে থাকা ১৪ জনের মধ্যে ১২ জন তাদের নিজ নিজ দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। গ্রেফতার দুই আসামী  ইন্সপেক্টর প্রদীপ কুমার দাশ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা জবানবন্দি দেননি।

র‌্যাব কর্মকর্তা আশিক বিল্লাহ বলেন, ‘এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খুব স্পষ্টভাবেই একটি বিষয় সামনে এনেছেন। ঘটনার সাক্ষী, আলামত, আসামীদের জবানবন্দির মাধ্যমে বস্তুনিষ্ঠভাবে তিনি নিশ্চিত হয়েছেন যে এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী টেকনাফ থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাশ। হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দেওয়া এবং অন্য খাতে প্রবাহিত করার জন্য তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ইন্সপেক্টর (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশের প্রত্যক্ষ ষড়যন্ত্রে অংশগ্রহণ করেন অপর আসামী লিয়াকত আলী, মো. নুরুল আমিন, পুলিশের সোর্স মুহাম্মদ আয়াজ ও মোহাম্মদ নিজামউদ্দিন। আবার লিয়াকত আলীকে সহযোগিতা করেন আরেক পুলিশ সদস্য নন্দ দুলাল। পাশাপাশি এপিবিএন’র তিন সদস্যের সহায়তায় এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। পরবর্তীতে ওই ফাঁড়ির আরও পুলিশ সদস্য সিনহার মৃত্যু নিশ্চিত করার এবং ঘটনা প্রবাহের সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, জুলাই মাসের ৭ তারিখে মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান, শিপ্রা দেবনাথ, সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও  রূপতি মিলে নীলিমা রিসোর্টে অবস্থান করেন। ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিও ডকুমেন্টারি তৈরির জন্য তারা টেকনাফে গিয়েছিলেন। একপর্যায়ে রূপতি ফিরে আসে। সে সময় সেখানে বেশ কিছু দিন থাকার সময়ে স্থানীয় সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাদের আন্তরিকতা গড়ে ওঠে। তাদের কাছ থেকে ওসি প্রদীপের ইয়াবা বাণিজ্য নিয়ে নানা বিষয় জানতে পারেন সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ।  এ বিষয়ে সিনহা ক্যামেরাসহ ওসি প্রদীপের কাছে বক্তব্য নিতে যান। সে সময়ে ওসি প্রদীপ তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে যায়। বক্তব্য না দিতে তাদের তিনি দিনের মধ্যে টেকনাফ ছেড়ে চলে যাওয়ার সরাসরি হুমকি দেন তিনি। র‌্যাব কর্মকর্তা আশিক বিল্লাহ বলেন, ওসি প্রদীপেরও একটি ইউটিউব চ্যানেল আছে। তিনি সিন্ডিকেট করে অবৈধ বাণিজ্য চালান টেকনাফে।

দু’টি কারণে হত্যাকাণ্ড: র‌্যাব জানায়, মূলত দুটি কারণে ওসি প্রদীপ এ ঘটনা ঘটান। একটি হলো, ওসি প্রদীপের  ইয়াবা বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয়। অপরটি, সিনহা এ তথ্য যেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে না জানাতে পারেন। হুমকির পরেও যখন মেজর সিনহা রাশেদ তাদের ইউটিউব চ্যানেলের কাজ ও ইয়াবা অনুসন্ধানের ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন, তখন ইন্সপেক্টর লিয়াকত ও ওসি প্রদীপসহ অন্যরা পরিকল্পনা করে এ ঘটনা ঘটান। র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, ‘ঘটনার পূর্ব থেকেই ওসি প্রদীপ সম্পর্কে উদাসীন ছিলেন কক্সবাজার জেলার সাবেক পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসাইন। এই ঘটনা ঘটার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন না করা, সিনহা রাশেদকে চিকিৎসার ব্যবস্থা না করাসহ বেশ কিছু কারণে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে তিনি অপেশাদারি আচরণ করেছেন বলে মনে করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য চার্জশিটে একটি সিদ্ধান্ত উপস্থাপনা করা হয়েছে বলে জানান র‌্যাব কর্মকর্তা।

থানায় সিনহার ল্যাপটপ ধ্বংস করা হয়: র‌্যাবের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা চার্জশিটে উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন রাতে নীলিমা রিসোর্টে অভিযান  চালায় টেকনাফ থানা পুলিশ। পরবর্তীতে সেখান থেকে তারা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদের ল্যাপটপ উদ্ধার করে।’ তিনি বলেন, ‘সেই ল্যাপটপ প্রথমে টেকনাফ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সাক্ষ্য-প্রমাণ ও সাক্ষীর জবানবন্দি থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়,  সিনহার ল্যাপটপে যে ডিজিটাল কনটেন্ট ছিল, সেগুলো তারা থানায় বসে ধ্বংস করে।’  র‌্যাব জানায়, ল্যাপটপে এমন কিছু ভিডিও ছিল  যা  প্রদীপ ও লিয়াকতের অস্তিত্ব সংকটে ফেলতে পারে। আমরা ডিজিটাল ডকুমেন্ট অনেক কিছু উদ্ধার করতে পারলেও ওই ভিডিওগুলো উদ্ধার করতে পারিনি।

সিনহা হত্যা মামলা বাতিলের আবেদন খারিজ: মামলার প্রধান আসামী লিয়াকত আলীর আইনজীবী মাসুদ সালাহ উদ্দীন জানান, মামলাটির আবেদনের পূর্ণাঙ্গ শুনানি শেষে গতকাল রোববার কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ঈসমাইল এই আদেশ দেন।

সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ নয় জনকে আসামী করে আদালতে হত্যা মামলা করেন। ওই মামলার প্রধান আসামী বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক পরিদর্শক লিয়াকত আলী। শারমিনের দায়ের করা এই মামলা ‘বে আইনি ও অবৈধ’ দাবি করে তা বাতিলের জন্য গত ৪ অক্টোবর রিভিশন আবেদন করেন লিয়াকত আলীর আইনজীবী মাসুদ সালাহ উদ্দিন। ওই দিন আদালত মামলাটি গ্রহণ করে পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য গত ২০ অক্টোবর দিন ধার্য করে। পরবর্তী শুনানির ওই নির্ধারিত দিনে (২০ অক্টোবর) মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস অসুস্থাতার কারণে আদালতে উপস্থিত থাকতে না পারায় আদালত পরবর্তী শুনানির দিন রাখে ১০ নভেম্বর। এরপর ১০ নবেম্বর শুনানির পূর্বনির্ধারিত দিনে আসামী লিয়াকতের আইনজীবী মাসুদ সালাউদ্দিন উদ্দিন অসুস্থ হয়ে পড়লে শুনানির দিন আবার পিছিয়ে যায়। ওইদিন আদালত মামলাটির পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য ১৩ ডিসেম্বর দিন ধার্য করে। আদালত চত্বরে লিয়াকত আলীর আইনজীবী মাসুদ সালাহ উদ্দীন বলেন, ‘রভিশন মামলাটি আদালত খারিজ করে দিয়েছে। এই আদেশে আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। আদেশ পুনর্বিবেচনার জন্য উচ্চ আদালতে যাব।

শিপ্রা-সিফাতের বিরুদ্ধে অভিযোগের ‘সত্যতা মেলেনি’: মেজর সিনহার সঙ্গে ‘ডকুমেন্টারি’ নির্মাণে যুক্ত স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শিপ্রা দেবনাথ ও সাহেদুল ইসলাম সিফাতের বিরুদ্ধে পুলিশের দায়ের করা মাদকের মামলায় অভিযোগের ‘সত্যতা পায়নি’ র‌্যাব। মামলা দুটির তদন্ত শেষে র‌্যাবের তদন্তকারী কর্মকর্তা এএসপি বিমান চন্দ্র কর্মকার গতকাল কক্সবাজারের সিনিয়র বিচারিক হাকিম তামান্না ফারাহর আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম বলেন, অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে র‌্যাবের তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। আদালত তা গ্রহণ করে ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ দিয়েছেন। শিপ্রা দেবনাথশিপ্রা দেবনাথসাহেদুল ইসলাম সিফাতসাহেদুল ইসলাম সিফাতসিফাত ও শিপ্রা স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের শিক্ষার্থী । ‘লেটস গো’ নামে একটি ভ্রমণ বিষয়ক ডকুমেন্টারি বানানোর জন্য সিনহার সঙ্গে প্রায় একমাস কক্সবাজারের হিমছড়িতে ছিলেন তারা।

সিনহার বোনের মামলায় যা আছে: গত ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে প্রধান আসামী করে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ জন পুলিশ সদস্যকে আসামী করা হয়। এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ৩১ জুলাই বিকালে ডকুমেন্টারির জন্য ভিডিও ধারণ করতে কক্সবাজারের নীলিমা রিসোর্ট থেকে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের রাস্তার পাশের পাহাড়ে যান মেজর অবসরপ্রাপ্ত সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ‘ডকুমেন্টারির প্রয়োজনেই’ সিনহার পরনে তখন কমব্যাট গেঞ্জি, কমব্যাট ট্রাউজার ও ডেজার্ট বুট ছিল। সিনহার বোনের করা মামলার এজাহারে বলা হয়, সিনহা ও সিফাত রাত ৮টা পর্যন্ত পাহাড়ে ভিডিও ধারণ করে ফিরতি পথে রওনা হন এবং রাত ৯টা ২৫ মিনিটের দিকে সিনহার প্রাইভেট কার শামলাপুর চেক পোস্টে পৌঁছায়। পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) লিয়াকতসহ পুলিশ সদস্যরা সেখানে গাড়ির ‘গতিরোধ’ করে বলে উল্লেখ করা হয়েছে মামলায়।

এজাহারে বলা হয়, সিনহা অবসরপ্রাপ্ত মেজর হিসেবে পরিচয় দিলে পুলিশ সদস্যরা গাড়ির সামনের বাঁ দিকের দরজা খুলে ‘টেনেহিঁচড়ে’ সিফাতকে বের করে নিয়ে যান। সিফাত তখন দুই হাত তুলে নিজের এবং গাড়িতে বসা সিনহার পরিচয় দেন। আসামীরা ওই সময় আরও ক্ষিপ্ত হয়ে গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে থাকা মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। মামলায় বলা হয়, এ সময় সিনহা গাড়ি থেকে নেমে দুই হাত উপরে তুলে বারবার নিজের পরিচয় দেন। কিন্তু পরিদর্শক লিয়াকত তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। বলতে থাকেন, ‘তোর মত বহুত মেজরকে আমি দেখছি। এইবার খেলা দেখামু’।

এরপর লিয়াকত টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে ফোন করে নিচুস্বরে সলাপরামর্শ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে লিয়াকত ফোনে প্রদীপকে বলতে থাকেন, ‘ঠিক আছে, শালারে শেষ কইরা দিতাছি’। ওই সময় কিছু বুঝে ওঠার আগেই পরিদর্শক লিয়াকত সম্পূর্ণ ঠাণ্ডা মাথায় পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের শরীরের উর্ধ্বাংশে কয়েক রাউন্ড গুলী করেন। গুলীর আঘাতে সিনহা রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে যান এবং নিজের জীবন রক্ষার জন্য ঘটনাস্থল থেকে উঠে পালানোর চেষ্টা করেন। তখন অন্য আসামীরা তাকে চেপে ধরে মাটিতে ফেলে দেয়। লিয়াকত আলি তখন সিনহার মৃত্যু নিশ্চিত করতে আরও এক রাউন্ড গুলী করেন।

এজাহারে বলা হয়, এর পরপর ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে ওসি প্রদীপ গুলীবিদ্ধ অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকা সিনহার শরীর ও মুখে কয়েকবার লাথি মেরে তার মৃত্যু সম্পর্কে নিশ্চিত হন এবং নিজের বুট জুতা দিয়ে ঘষা দিয়ে নিহতের মুখমণ্ডল বিকৃত করার চেষ্টা করতে থাকেন। পুলিশ সদস্যরা এ সময় মামলার সাক্ষী এবং ঘটনাস্থলের আশপাশে উপস্থিত লোকজনকে ‘অস্ত্র উঁচিয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে’ সেখান থেকে তাড়িয়ে দেন। এরপর রাত পৌনে ১২টার দিকে সিনহাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে উল্লেখ করা হয় মামলায়।আদালত মামলাটির তদন্ত করার আদেশ দেন র‌্যাবকে।

এরপর গত ৬ আগস্ট প্রধান আসামী লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৭ পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরবর্তীতে সিনহা হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার অভিযোগে পুলিশের দায়ের মামলার ৩ জন সাক্ষী এবং শামলাপুর চেকপোস্টের দায়িত্বরত আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) ৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। এ ছাড়া একই অভিযোগে পরে গ্রেপ্তার করা হয় টেকনাফ থানা-পুলিশের সাবেক সদস্য কনস্টেবল রুবেল শর্মাকেও।

সর্বশেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২০, ০২:০৪
মুক্তিবাণী

পাঠকের মন্তব্য

ফেসবুকে

সর্বশেষ আপডেট

ভিডিও