প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘তৃণমূল থেকে নারী নেতৃত্ব গড়ে তুলতে কাজ করছে সরকার। এ লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার আইনে গ্রাম থেকে অর্থাৎ তৃণমূল থেকে নারী নেতৃত্বের সুযোগ রাখা হয়েছে।’
গতকাল বুধবার দুপুরে বেগম রোকেয়া দিবস উদযাপন ও বেগম রোকেয়া পদক ২০২০ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নেন। অনুষ্ঠানে সমাজসেবায় বিভিন্ন অবদানের জন্য এ বছর পাঁচ নারীকে বেগম রোকেয়া পদক ২০২০ দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী রওশন আক্তার।
বেগম রোকেয়া পদক-২০২০-এর জন্য মনোনীত পাঁচ জন নারী ব্যক্তিত্বকে সম্মাননা পদক, সনদ ও চেক প্রদান করা হয়। নারী শিক্ষায় প্রফেসর ড. শিরীন আখতার, পেশাগত উন্নয়নের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে কর্নেল (ডা.) নাজমা বেগম, নারীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে মঞ্জুলিকা চাকমা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির মাধ্যমে নারী জাগরণের ক্ষেত্রে বেগম মুশতারী শফি (বীর মুক্তিযোদ্ধা) এবং নারী অধিকারে অবদানের ক্ষেত্রে বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরিদা আক্তার এ বছর বেগম রোকেয়া পদক লাভ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরার কাছ থেকে সম্মাননা পদক, সনদ ও চেক গ্রহণ করেন।
সরকার প্রধান বলেন, ‘আমরা চাই তৃণমূল পর্যায় থেকে নারীরা নেতৃত্বে থাকুন। কেননা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে নারী-পুরুষ সবাইকে সমানভাবে কাজ করতে হবে।’
নারী নেতৃত্বের বিকাশে সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের স্থানীয় সরকার আইনে সুনির্দিষ্টভাবে মেয়েদের জন্য সংরক্ষিত পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। একেবারে গ্রাম থেকে অর্থাৎ তৃণমূল থেকে নারী নেতৃত্ব যেন গড়ে ওঠে, আমরা সেই সুযোগ করে দিয়েছি। আমরা কর্মজীবী নারী হোস্টেল করে দিয়েছি। এটা শুধু ঢাকাতে না, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কর্মজীবী নারী হোস্টেল করে দেবো, যেন নারীরা কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষিত থাকেন।’
তিনি শীর্ষ পর্যায়ে নারীদের নেতৃত্বে থাকার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘নারী নেতৃত্বের ক্ষেত্রে সংসদে একটা ইউনিক অবস্থা। স্পিকার নারী, সংসদ নেতা, বিরোধীদলীয় নেতা সবাই নারী। দীর্ঘদিন এই ব্যবস্থাটা চলছে। বিশ্বব্যাপী এটা একটা খুব সমাদৃত হয়।’
নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপও তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘নারী ও শিশু নির্যাতন বিশ্বব্যাপী একটা সমস্যা। এ সমস্যার সমাধানের জন্য ইতোমধ্যে আমরা হেল্প লাইন ১০৯ ও ৯৯৯ চালু করেছি। ৯৯৯-এ কল করলে পুলিশের সাহায্য পাওয়া যায়। এভাবে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করার পদক্ষেপ নিচ্ছি, যাতে সমাজে নারীরা নির্যাতিত না হন। নারীদের জন্য অনস্টপ সার্ভিস চালু করেছি। যখন আমাদের মেয়েরা নির্যাতনের শিকার হন, তখন যারা নির্যাতন করেছে তাদের খুঁজে বের করাও প্রয়োজন। আমরা ইতোমধ্যে ডিএনএ ল্যাবরেটরির ব্যবস্থা করেছি। ডিএনএ ল্যাবরেটরির মাধ্যমে যেকোনও অপরাধ হলে সেটাকে পরীক্ষা করে অপরাধীদের চিহ্নিত বা শনাক্ত করা সহজ হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহীয়সী নারীও নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার জন্মদিন বুধবার। আমার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলেরও জন্মদিন। সায়মার জন্য আপনাদের কাছে দোয়া চাই। সে অটিস্টিক বাচ্চাদের নিয়ে কাজ করছে। সমাজে একসময় অটিস্টিক বাচ্চারা অবহেলিত ছিল। তার উদ্যোগে জাতিসংঘে একটা রেজুলেশন পাস হয়েছিল। তাছাড়া পুতুলের তৎপরতায় মানুষ এবং বিভিন্ন কমিউনিটি ও এলাকায় সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। আগে যার পরিবারে অটিস্টিক বাচ্চা থাকতো সেই পরিবারের মায়েরা সমাজে মুখ দেখাতে পারতেন না এবং পরিবারের কাছে নানা কথা শুনতে হতো। এখন আর সেই অবস্থা নেই। অটিস্টিক বাচ্চাদের চিকিৎসা, তাদের কাউন্সেলিং যা যা দরকার সে ব্যবস্থা আমরা করে যাচ্ছি।’
কর্মক্ষেত্রে সব জায়গায় নারীদের সাফল্যের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মেয়েরা এখন রেলগাড়িও চালাচ্ছে, আবার গাড়িও চালাচ্ছে। এয়ারফোর্সে মেয়েরা ভালো করছে, সবখানে তারা ভালো করছে।’ নারীরা যাতে পেশাগত জায়গায় ভালো করতে পারেন, নারী-পুরুষ সমানভাবে কাজ করতে পারেন, সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
সর্বশেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২০, ০২:০২
পাঠকের মন্তব্য